যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার কতটা প্রশ্নবিদ্ধ; মানবাধিকার প্রশ্নে র্যাব যখন নিষেধাজ্ঞায়?
বিশ্ব জুড়ে মানব অধিকারের প্রশ্নে অনেক রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক ভাবে চাপে রাখে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব জুড়ে মানব অধীকারের উচ্চশীর করে বেরানো, খোত যুক্তরাষ্ট্রেই যখন গুরুতর মানব অধিকার লঙ্ঘন করে, তখন তাদের মুখ থেকে মানব অধিকারের কথা বলা ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
গুয়ানতানামো কারাগার, এমন একটি নাম, যেখানে মানব অধিকার শুধুই প্রহসনের নাম। বিশ্বব্যাপী নানা প্রতিবাদ সত্ত্বেও কারাগারটিকে অব্যাহতভাবে নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে একে মার্কিনীদের ‘লজ্জা’ হিসাবে অভিহিত করা হয়।
কারাগারটি বন্দীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত। কোন প্রকার বিচার ছাড়াই এইখানে বন্দীদের আটক রাখা হয় এবং তথ্য আদায়ের লক্ষ্যে বন্দীদের ওপর চালানো হয় পৈশাচিক অত্যাচার ও নির্যাতন। 'ওয়াটার বোর্ডিং'-সহ নানান বর্বোরোচিত ও আইনবহির্ভূত উপায়ে নির্যাতন চালানো হয়। কারাগারটিতে নির্যাতনের প্রকার ও মাত্রা এতই বেশি যে, এটিকে ‘মর্ত্যের নরক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
২০১২ সালে, ৮০০ জন বন্দীকে মুক্তি দেয়ার পরেও এ কারাগারে এখন প্রর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ১৭১ জন বন্দী আটক অবস্থায় রয়েছে।
মার্কিন-বিরোধী তৎপরতায় সংশ্লিষ্ট জঙ্গী, সন্ত্রাসী ও গুপ্তচর সন্দেহে বিভিন্ন দেশের নাগরিককে আটক রাখার কথা বলা হলেও বন্দীশালায় বিনা বিচারে আট বছর আটক থাকার পরে, ১৯৮ জনের মধ্যে ১৩০ জনেরও বেশি বন্দী নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। তাহলে কোন উদ্যেশ্যে এমন পাশবিক নির্যাতন তা বরাবরই প্রশ্নের মুখে। এখন প্রর্যন্ত মাত্র ৬ জন বন্দীকে বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়া, আমেরিকান রাজনীতির বা তাদের পররাষ্ট্রবিষয়ক পরিকল্পনার বিষয়ে সমালোচনা করলেই সেই মানুষটি কেন আমেরিকার শত্রুতে পরিণত হবে, এই ভাবনাটাও কতটুকু অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক?
ভিন্ন মত দমন ও মানবঅধিকারের অভিযোগ তুলে, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আরোপ করা হয়েছে নানান নিষেধাজ্ঞা। কিন্তুু যে অভিযোগ তারা অন্য দেশের বিরুদ্ধে তুলছে, সে সব কর্মকান্ডই তারা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে তাদের দেশের স্বার্থে।
কিউবার দক্ষিণ-পূর্বে গুয়ানতানামো উপসাগরে তথা কিউবার মাটিতে, ১১ জানুয়ারি ২০০২ সালে তৈরি করা হয়েছে এই কারাগার। কিউবার ৪৫ বর্গকিলোমিটার স্থানটি
আগে মার্কিন নৌবাহিনীর ঘাঁটি হিসাবে ব্যাবহার করা হত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করে এটি।
মূলত ভিন্ন একটি দেশের মাটিতে, সেই দেশের ভূমি দখল বা লিজ নিয়ে কারাগার বানানোর পরিকল্পনার ভেতরেই আছে মানবাধিকার হরণের একটি রাজনৈতিক ও সামরিক সিদ্ধান্ত, যা মানবতার বিরুদ্ধে যায়।
২০০৬ সালের ৯ জুন রাতে ইয়েমেন ও সৌদি আরবের ৩ নাগরিককে অত্যাচার চালিয়ে হত্যার পর তাদের মরদেহ সেলের ভেতরে ঝুলিয়ে রাখা হয়। অথচ, তাদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
পরে ওই ঘটনাকে 'ত্রিপল সুইসাইড' বলে ঢাকা দেয় মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কারাবন্দিদের এমনভাবে হত্যা করতো, যাতে বোঝা যায় আসামীরা আত্মহত্যা করেছে।
গুয়েতেমালার কারাগার ছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রে আরও উল্লেখযোগ্যহারে মানব অধিকার লঙ্গিত হয়েছে যা পুরো বিশ্ব জুরে সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এইসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ দ্বারা জর্জ ফ্লয়েডকে নির্মমভাবে হত্যা করা, মার্কিন পার্লামেন্টে হামলা করে চার জনকে হত্যা করা যেখানে দুষ্কৃতকারীরা স্পিকারের চেয়ারেই বসা ছিল।
বিশ্বজুড়ে আলোচিত এক শব্দের নাম মানবাধিকার। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জন্মগতভাবে সকল মানুষ স্বাধীন এবং সমান মর্যাদার অধিকারী। মানবাধিকার মূলত স্বতঃসিদ্ধ ও অলঙ্ঘনীয় হলেও ইতিহাস লগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন যুদ্ধ, সংঘাত ও হানাহানি বরাবর মানবাধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এদিকে বিশ্বজুড়ে মানব অধিকারের কথা উচ্চশির করলেও নিয়ন্ত্রক ও শাসকদের হাতেই লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। তাই যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে মানবাধিকার ইস্যুকে কেন্দ্র করে, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে অন্য রাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যাত করতে পারে না।