হিমালয়ের কৈলাস পর্বত: এটি কেন এত রহস্যময়
এভারেস্ট থেকে শুরু করে অন্য বিভিন্ন পর্বতের চূড়ায় পর্বতারোহীদের অভিগমন হলেও, কৈলাস পর্বত এমন একটি পর্বত যার চূড়ায় কখনো কেউ উঠতে পারেননি।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের যার উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার। কিন্তুু এরপরেও মাউন্ট এভারেস্টে পবর্তারোহীরা পা রেখেছে ঠিকই। তবে এর ব্যতিক্রমটা ঘটেছে এভারেস্টের চেয়েও কম উচ্চতাসম্পন্ন এক পর্বত কৈলাসের ক্ষেত্রে। পর্বতটির উচ্চতার ৬ হাজার ৬৩৮ মিটার। অর্থাৎ এভারেস্টের চেয়েও ২২০০ মিটার কম।
এটি তিব্বতের হিমালয় পর্বতমালার একটি অংশ। এশিয়ার বৃহৎ চারটি নদী তথা সিন্ধু নদী, শতদ্রু নদী, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীগুলোর উৎস স্থান এই কৈলাস থেকেই। খাড়া হওয়ায় চূড়ায় কোনো বরফ না জমে নিচে পড়ে যায়। বরফ গলে গিয়ে উৎপত্তি হয় নদীগুলোর। শৃঙ্গটি হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং বন ধর্ম - এই চারটি ধর্মের তীর্থস্থান। কৈলাস পর্বতের কাছেই তিব্বতের মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল অবস্থিত। অনেক তীর্থযাত্রী হাজার বছর ধরে পর্বতের উদ্দেশ্যে প্রণাম জানাতে চারপাশে ৫০ কিলোমিটার পথ জুড়ে হেঁটেছেন। এ পর্বতের গায়ে আছে অনেক প্রাচীন গুহা। যেখানে দেখা মিলে বহু বছর ধরে তাপস্যে মগ্ন বৌদ্ধ ও হিন্দু সন্ন্যাসীদের।
তিব্বতে প্রচলিত প্রাচীন ধারণা অনুযায়ী, শুধু গুরু মিলারেপাই পা রাখতে পেরেছিলেন কৈলাস-শীর্ষে। ফিরে আসার পর তিনি এই পর্বতে আহরণ করার সবাইকে নিষেধ করেছিলেন। কারণ একমাত্র সে-ই মানুষই পারবে এর শীর্ষে যেতে‚ যার আছে অত্যধিক আধ্যাত্মিক শক্তি।
কৈলাস পর্বতের আবহাওয়ায় এমন কিছু আছে যাতে নাকি মানুষের চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ দ্রুত ফুটে ওঠে। সাধারণভাবে মানুষের নখ-চুল যে হারে বাড়ে‚ কৈলাস পর্বতে অন্তত ১২ ঘণ্টা কাটালে নাকি এই বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়ে যায়।
বিখ্যাত পর্বতারোহী রেইনহোল্ড মাইনসার কৈলাস চূড়ায় আরোহণ করার অনুমতি চাইলেও, চীনা সরকার তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়।
কেন পর্বতারোহীরা এর চূড়ায় উঠতে পারেননি? এর সমাধান কিংবা কোন উত্তর কখনো মেলেনি। কৈলাসের ইতিহাসজুড়ে আছে বিচিত্র সব ঘটনা। পর্বতে কোনো পর্বতারোহী ওঠার চেষ্টা করলে, সম্মুখীন হতে হয় নানা অপ্রীতিকর ঘটনার ।
যে বা যারাই এই পর্বতে ওঠার চেষ্টা করেছেন, কিছুসময় পরই তাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এমনকি দ্রুতগতিতে মাথার চুল ও হাতের নখ বাড়তে থাকে।
১৯৯৯ সালে এ পর্বতকে নিয়ে রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ নিকোলাই রোমনভ একটি বই লিখেছেন যেখানে তিনি জানিয়েছেন কৈলাস পর্বতের চারদিকে একটি অলৌকিক শক্তির কথা।
প্রথমদিকের মহাদেশগুলোর সংঘর্ষে তৈরি হয়েছিল এই কৈলাস পর্বত। ভূতাত্ত্বিক এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে এর গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। হিমালয়ের প্রথম এবং প্রধান রেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে পর্বতটি।
Source - Suktara tv