চাঁদ থেকে অন্য দেশে নজরদারি চালাচ্ছে আমেরিকা
আমেরিকার নিরাপত্তার প্রশ্নে নজরদারি, এবার শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, নজরদারি চালানো হচ্ছে চাঁদের কক্ষপথেও।
আমেরিকার বিমানবাহিনীর একটি ভিডিয়ো-বিবৃতিতে এই বিষয়গুলোই আবারও জোরালো হল। চাঁদের আরও কাছাকাছি এলাকা ‘সিসলুনার অরবিট’ থেকে অনান্য দেশের উপর নজরদারি চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এটির মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা অন্যান্য দেশের উপগ্রহগুলি আমেরিকার উপর কী ভাবে, কতটা নজর রাখছে, সে বিষয়গুলি শনাক্ত করতে সক্ষম হবে। আমেরিকার সেনাবাহিনীর নবগঠিত শাখা— ‘স্পেস ফোর্স’ এই বিষয়গুলো নজরদারি করবে।
বৃহস্পতিবার আমেরিকার বিমানবাহিনীর এয়ারফোর্স রিসার্চ ল্যাবরেটরির ওই ভিডিয়ো বার্তায় বলা হয়েছে, "বর্তমানে আমেরিকার ভূপৃষ্ঠ হতে প্রায় ৩৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত নজরদারি চালাতে পারে। এই উচ্চতায় প্রায় সব দেশের জিওস্টেশনারি উপগ্রহ গুলো অবস্থান করছে। তবে এবার চাঁদের কক্ষপথ থেকে নজরদারি চালানো সম্ভব হলে, নজরদারি ক্ষেত্র প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠ হতে প্রায় এক হাজার বেশি দূরত্ব পর্যন্ত আমেরিকার সেনাবাহিনী নজরদারি চালাতে পারবে।"
নিরাপত্তা ও গোয়েন্দাগিরির জন্য আমেরিকা-সহ বহু দেশের সামরিক গোয়েন্দা উপগ্রহগুলি মূলত অবস্থান করছে পৃথিবীর ‘জিওস্টেশনারি অরবিট’-এ। জিওস্টেশনারি অরবিট পৃথীবির বিষুবরেখা থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান করছে।
পৃথিবী নিজ অক্ষে আবর্তন করতে ২৪ ঘন্টা সময় নেয়। জিওস্টেশনারি অরবিটে থাকা উপগ্রহগুলিও ঠিক একই সময়ই নেয়, পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে। এর ফলে, পৃথিবী থেকে ওই কক্ষপথে থাকা উপগ্রহ বা মহাকাশযানগুলিকে স্থির বলে মনে হয়।
পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে যত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত জিওস্টেশনারি অরবিট, পৃথিবী থেকে তার প্রায় সাড়ে নয় গুণ দূরত্বে রয়েছে চাঁদ। পৃথিবীর জিওস্টেশনারি অরবিট আর চাঁদের মধ্যবর্তী এলাকাটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ‘সিসলুনার স্পেস’ হিসাবে বলে থাকেন।
মহাকাশে এই এলাকায় থাকলে কোনও উপগ্রহ বা মহাকাশযান যেমন পৃথিবীর অভিকর্ষ বলকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করতে পারে না, তেমনই তাদের উপর এসে পড়ে চাঁদের অভিকর্ষ বলের টান। বলা যায়, চাঁদ ও পৃথিবীর টানের রেষারেষি চলে ওই এলাকায় থাকা উপগ্রহগুলির উপর।
আমেরিকার বিমানবাহিনীর রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে প্রকল্পের অধিকর্তা ব্রায়ান উইডেন বলেছেন, ‘‘প্রথমে জানার চেষ্টা করা হবে যে চাঁদের আরও কাছাকাছি ওই স্থানে অন্য কোন দেশের তৎপরতা আছে কি না। এরপর পর্যবেক্ষণ করা হবে ওই স্থানে অন্য দেশগুলির কাজকর্ম ও গবেষণা। আমেরিকার নিরাপত্তার প্রশ্নে সেসব দেশগুলোর কাজকর্ম ও গবেষণা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে কি না। আর এমন হলে, কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে সেগুলোও পর্যালোচনা করা হবে।