ইখতিয়ার উদ্দিন মো: বখতিয়ার খলজী: তার আকস্মিক বাংলা অভিযানের ইতিহাস
মধ্যযুগে ভারতিয় উপমহাদেশে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজি ছিলেন অন্যতম
সৈনিক জেনারেল এবং প্রথম মুসলিম যিনি বাংলা ও বিহার জয় করেছিলেন। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে বখতিয়ার বাংলার রাজধানী নদীয়ায় পৌঁছে বাংলা জয় করে ফেলেন। এই ভিডিওতে আমরা জানবো, বখতিয়ার খলজির এই অনন্য আকস্মিক ও বিস্ময়কর বাংলা অভিযানের ইতিহাস।
বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দূর্গ ছিল যার নাম তেলিয়াগড় ও সিকড়িগড়। এই দুর্গ দুটি রক্ষা করতে পারলেই বাংলাকে বহিরাক্রমণ থেকে বাঁচানো সম্ভব হত।
কেননা আক্রমণকারীরা তখন গঙ্গা নদীপথেই অভিযান পরিচালনা করতেন। অবশ্য লক্ষণ সেনও দুর্গ দুটি রক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি দুর্গে সৈন্য সমাবেশ করে শত্রুর মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু অভিজ্ঞ মুসলিম সেনা বখতিয়ার খিলজি অভিযান পরিচালনার সময়, পূর্বের আক্রমণকারীদের মতো গঙ্গাপথকে বেছে না নিয়ে তেলিয়াগড়ের দক্ষিণ দিকে বিস্তীর্ণ জঙ্গলাকীর্ণ স্থান, ঝাড়খণ্ড দিয়ে অগ্রসর হন।
বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে ঝাড়জঙ্গল ভেদ করে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন ছিল। এজন্য বখতিয়ার খলজী সেনাবাহিনীকে ছোট ছোট দলে ভাগ করেন এবং জঙ্গল পথে অগ্রসর হন। বখতিয়ার খিলজি নিজেই প্রথম দলটির নেতৃত্ব দেন।
অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে বখতিয়ার বাংলার রাজধানী নদীয়ায় পৌঁছে যান। তার সাধারণ ও শান্তশিষ্ট স্বভাব দেখে কেউ ভাবতেই পারেন নি ইনিই সেই মহান বীর, যার হাতে পতন ঘটতে চলেছে দীর্ঘদিনের বাংলার হিন্দুয়ানী শাসন।
বাংলার সাধারণ মানুষ ভেবেছিল কিছু ঘোড়া ব্যাবসায়ী রাজ্যে প্রবেশ করেছে। কিন্তুু যখন তারা লক্ষণ সেনের প্রাসাদে গিয়ে রক্ষীদের হত্যা করেছিলেন, রাজা লক্ষণ সেন তখন মধ্যাহ্নভোজে বসেছিলেন। রাজপ্রাসাদের গন্ডগোল হঠাৎ তার কানে এলে, তিনি বুঝতে পারলেন তার প্রসাদ আক্রমণের শিকার হয়েছে। এরপর কিনি প্রাসাদের পশ্চাৎদ্ধার দিয়ে পলায়ন করেন এবং বিক্রমপুরে গিয়ে আশ্রয় নেন। ফলে নদীয়া বিনা যুদ্ধেই বখতিয়ার খিলজির অধিকারে চলে আসে। রাজার ফেলে যাওয়া সম্পদ এবং অনেক হাতি ও ঘোরা বিজয়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, বখতিয়ার মাত্র ১৮ জন সেনা নিয়ে লক্ষণ সেনের প্রসাদে হামলা করেন। বিজয়ের পর বখতিয়ার নদীয়ায় তিনদিন অবস্থান করেন। এরপর উত্তরবঙ্গে এসে বাংলার প্রাচীন রাজধানী গৌড় অধিকার করেন। এটিও তিনি বিনা যুদ্ধে অধিকার করেন। লক্ষণ সেনের নামানুসারে তখন গৌড়ের নাম ছিল লক্ষণাবতী, বখতিয়ার এর নাম পরিবর্তন করে রাখলেন লখনৌতি। এখানে তিনি নতুন শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করলেন। বখতিয়ার নিজে সুলতান ছিলেন না এবং সুলতান উপাধিও নেননি। তিনি সুলতান মুহাম্মদ ঘুরীর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে তার নামে খুৎবা পাঠ ও মুদ্রা প্রচলন করেন। তিনি তার অধিকৃত রাজ্যে অসংখ্য মসজিদ, মাদ্রাসা এবং খানকাহ নির্মাণ করেন।