কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এক সাগর কৃষ্ণসাগর

 



পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার মধ্যে ৪ লক্ষ , ৩৬ হাজার চারশো বর্গ কিলোমিটারের  বিশেষ সামুদ্রিক অঞ্চল ‘কৃষ্ণ সাগর’। প্রাচীন বিশ্বের বহু সমুদ্র বাণিজ্য এই সাগরের মাধ্যমে হয়েছে ।  সাগরটির তলদেশে থেকে প্রাপ্ত হাজার বছরের পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। 

কৃষ্ণ সাগর পূর্ব ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল -কে পৃথক করেছে। এই সাগরের সাথে যুক্ত দেশগুলো হলো- বুলগেরিয়ার, রোমানিয়া, জর্জিয়া, রাশিয়া, তুরস্ক এবং ইউক্রেন। একাধিক প্রণালী এবং সাগরের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে সাগরটি আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে।  তবে কৃষ্ণ সাগরের থেকে আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযোগ অতটা সহজ নয়। কৃষ্ণ সাগর প্রথমে বসফরাস প্রণালীর মাধ্যমে মর্মর সাগরের সাথে যুক্ত হয়ে দার্দানেলিস প্রণালীর মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে এজিয়ান সাগরের সাথে। আর এজিয়ান সাগর থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে সবশেষে জিব্রাল্টার প্রণালীর মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগর আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত হয়েছে।  

এছাড়া কৃষ্ণ সাগরের সাথে যুক্ত আরেকটি সাগর আজভ সাগর যা কের্চ প্রণালীর মাধ্যমে সাগর দু’টি সংযুক্ত রয়েছে।  

প্রায় সাত হাজার বছর আগে বর্তমান কৃষ্ণ সাগর ছিল একটি মিঠাপানির হ্রদ। ভূমধ্যসাগর থেকে লবণাক্ত পানি কৃষ্ণ সাগরে প্রবেশ করে। এর ফলে কৃষ্ণ সাগরের মিঠাপানির জলজ প্রাণী গুলো মারা যায়, এবং লোনাপানির সামুদ্রিক জীব সাগরটিতে বসবাস করতে শুরু করে।

কৃষ্ণ সাগরের আশেপাশে একাধিক পার্বত্য অঞ্চল রয়েছে। এইসব পাহাড় থেকে বেশ কয়েকটি নদী কৃষ্ণ সাগরে পতিত হয়েছে। নদী গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য - দানিয়ুব নদী, নিপার নদী, ডিওনী নদী এবং পিভডেনিই বাহ নদী। একাধিক দেশের অধীনে কৃষ্ণ সাগরে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে যার মধ্যে বুলগেরিয়ার ৮ টি, রোমানিয়ার ৩ টি, রাশিয়ার ৩ টি, তুরস্কের ৪ টি এবং ইউক্রেনের ১৪ টি দ্বীপ রয়েছে। 

বর্তমানে এসব দ্বীপে জনপ্রিয় পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। কৃষ্ঞ সাগরের নিচের দিকে অক্সিজেন সহজে পৌঁছাতে পারে না। অক্সিজেনের অভাবে কৃষ্ণ সাগরের তলদেশের পরিবেশ জৈবিক ভাবে মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে।   এছাড়া  অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে বিভিন্ন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ সহজে নষ্ট হয় না।

তুরস্কের উত্তর দিকের কৃষ্ণ সাগরের তলদেশে  প্রায় পঞ্চাশটি পুরনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। জাহাজ গুলো দেখে অনুমান করা হয় যে এগুলো বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বাণিজ্যিক জাহাজ ছিল। এত সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও কাঠের জাহাজগুলো এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এমনকি জাহাজগুলোর দড়ি প্রর্যন্ত  অক্ষত রয়েছে। 

কৃষ্ণসাগরের সাথে  বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার সিমান্ত থাকায় অঞ্চলটিতে রাশিয়ার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে, এছাড়া ইউক্রেনসহ ন্যাটোভূক্ত রাষ্ট্র তুরস্কের অবস্থানও কৃষ্ণ সাগরে। 

রাশিয়ার সীমান্তবর্তী সংঘাত নিয়ে বর্তমানে উত্তপ্ত কৃষ্ণ সাগরের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি। তবে শুধু  ইউক্রেন নয়, কৃষ্ণ সাগরের অন্যান্য দেশেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে রাশিয়া। 

কৃষ্ণ সাগর রাশিয়ার কাছে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই অঞ্চলের  ভূ -রাজনৈতিক পরিস্থিতি  ও নিরাপত্তা কৌশল সম্পর্কে  জানতে পরবর্তী  ভিডিও ফলো করুন এবং চ্যানেল এন.আর.বি এর সাথে থাকুন।



Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.