ভূমধ্যসাগর: গুরুত্বপূর্ণ এক সামুদ্রিক অঞ্চল

 



চারদিকে বিভিন্ন দেশের সীমানা দ্বারা আবদ্ধ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক সামূদ্রিক অঞ্চল ভূমধ্যসাগর। এর ইংরেজি নাম  মেডিটেরিয়ান সি।  বিশ্ববাণিজ্য, রাজনীতি ও সংস্কৃতি প্রসারে এই সাগরের অবদান অনেক। বহু প্রাচীন সভ্যতার আঁতুড়ঘর হিসেবে খ্যাত ভূমধ্যসাগর ৬০ লক্ষ বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং ৫৩ লক্ষ বছর আগে জানক্লিন বন্যায় পুনরায় পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে প্রায় ৬ লক্ষ বছর ধরে শুষ্ক ছিল।

ভূ-রাজনীতি ও ভূকৌশলগত অবস্থানের গুরুত্বের বিষয়ে এ অঞ্চলের ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, সামরিক কৌশল এবং অর্থনৈতিক সংযোগ মূলত ভূমধ্যসাগর ও এর অববাহিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও জড়িত।

প্রাচীনকালে রোমান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরীন বা উসমানীয় সভ্যতা ভূ-মধ্যসাগরের বলকানে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধ করেছিল এবং স্থাপন করেছিল সাম্রাজ্য। বর্তমানেও এই ভৌগলিকভাবে এই অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম। 

ইউরোপ, আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যবর্তী সাগরদ্বীপ ভূমধ্যসাগর হিসেবে পরিচিত। সাগরের উত্তর দিকে রয়েছে ইউরোপ মহাদেশ ও দক্ষিণ দিকে আফ্রিকা মহাদেশ এবং ভূমধ্যসাগরের পূর্বদিকে এশিয়া মহাদেশের অবস্থান। চারদিকে ভূমি দ্বারা বেষ্টিত এই সাগরতীরের আয়তন প্রায় ২৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার। ভূমধ্যসাগরের গড় গভীরতা ৪৯০০ ফুট এবং এই সাগরের সবচেয়ে গভীরতম স্থানের গভীরতা ১৭,২৮০ ফুট।

 সাগর অথবা দুটি বিশাল জলরাশি কে সংযুক্তকারী সরু জলপথকে প্রণালী বলা হয়।  ভূমধ্যসাগরে একাধিক প্রণালী ও জনপথ এর সাহায্যে অন্যান্য বিভিন্ন সাগর ও মহাসাগর এর সাথে যুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে স্পেন ও মরক্কোর মধ্যবর্তী জিব্রাল্টার প্রণালী ভূমধ্যসাগরকে আটলান্টিক মহাসাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে। এছাড়া ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝে সমুদ্র পথের দূরত্ব কমাতে সুয়েজ খাল খননের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সাথে যুক্ত করা হয়েছে।

ভূমধ্যসাগরে ২১-টি দেশের অবস্থান। এই সাগরের পশ্চিম-পূর্ব উপকূল বরাবর রয়েছে স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, মাল্টা, স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া এবং হার্জেগোভিনা, মোনাকো, মোন্টেনেগো, আলবেনিয়া, গ্রিস এবং তুরস্ক। উত্তর থেকে দক্ষিণ উপকূল বরাবর রয়েছে- সিরিয়া, লেবানন, ইস্রায়েল। পশ্চিম থেকে পূর্ব উপকূল বরাবর রয়েছে মোরোক্কো, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া, লিবিয়া, মিশর।

এই সাগরের প্রধান দ্বীপদেশ হলো- মাল্টা, সাইপ্রাস, উত্তর সাইপ্রাস। ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকায় বহু সভ্যতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেসোপটেমীয় সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, গ্রিক সভ্যতা ও রোমান সভ্যতা 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অবৈধ অভিবাসন চেষ্টার কারণে ভূমধ্যসাগর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে। যুদ্ধ, সহিংসতা, খরা ও দারিদ্রতার কারণে আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার উদ্বাস্তু জনগণ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করে। আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অভিবাসন প্রত্যাশীরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যায় বা যাওয়ার চেষ্টা করে। ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টাকালে এই ভূমধ্যসাগরে অনেকেরই সলিল সমাধি হয়।

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.