রাশিয়ার কাছে কৃষ্ণসাগর কেন গুরুত্বপূর্ণ?

 




ইউক্রেন - রাশিয়ার সীমান্তবর্তী সংঘাত নিয়ে বর্তমানে উত্তপ্ত কৃষ্ণ সাগরের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি। তবে শুধুমাত্র ইউক্রেন নয়, কৃষ্ণ সাগরের অন্যান্য দেশগুলো ঘিরেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে রাশিয়া। কৃষ্ণ সাগর ঘিরে রাশিয়ার এই যুদ্ধংদেহী মনোভাবের শুধু বর্তমানেই নয়, বিগত কয়েক শত বছর ধরেই কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। 

এই ভিডিওতে আলোচনা করা হবে, কৃষ্ণ সাগর কেন রাশিয়ার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? 

প্রথমত, পূর্ব ইউরোপীয় এবং ককেশাসীয় দেশগুলোর একমাত্র সামুদ্রিক পথ হলো কৃষ্ণ সাগর। কৃষ্ণসাগরের চারদিকে ভূমি বেষ্টিত হলেও বসফরাস প্রণালী ও দার্দানেলিস প্রণালীর  মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরের সাথে যুক্ত হয়েছে সাগরটি।  কৃষ্ণ সাগরের তীরে পূর্ব ইউরোপের এবং ককেশাসের ৭ টি দেশ রয়েছে।

তুরস্ক, জর্জিয়া, ইউক্রেন, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, মলদোভার পাশাপাশি এই সাগরের তীরবর্তী আরেকটি দেশ হলো রাশিয়া। দির্ঘ আয়তন বিশিষ্ট রাশিয়ার সাথে মোট ১২ টি সাগরের সংযোগ থাকলেও বাণিজ্যিক সুবিধার জন্যে একমাত্র জলপথ হচ্ছে কৃষ্ণ সাগর। 

রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরের বিকল্প অনান্য সাগরে যে যে অসুবিধার সম্মুখীন হয় -

 বাল্টিক সাগরের অসুবিধা, 

কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে অবস্থিত রাশিয়ার কিছুটা উত্তরে বাল্টিক সাগরের সাথে সংযোগ থাকলেও বাল্টিক সাগর শীতকালে মাঝেমধ্যে বরফে আচ্ছাদিত থাকে।

 এছাড়াও বাল্টিক সাগরকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে ইউরোপীয় দেশগুলো। ফলে সংকট মুহূর্তে বাল্টিক সাগর বন্ধ করে রাশিয়াকে চাপে রাখতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহ। 

বাল্টিক সাগর থেকে রাশিয়ার জনবহুল, কৃষি সমৃদ্ধ প্রদেশগুলোর দূরত্ব মোটামুটি বেশি, ফলে এই রুট বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না।

আর তাই রাশিয়ার জন্য কৃষ্ণসাগরের বিকল্প বাল্টিক সাগর হতে পারে না। একই অবস্থা রাশিয়ার আর্কটিক সাগরেও যেটি রাশিয়ার উত্তর উপকূলে অবস্থিত। 

এরপর রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগর অবস্থিত হলেও এই সাগর ব্যবহার করে রাশিয়ার পক্ষে ন্যূনতম বাণিজ্য সম্পাদন করা সম্ভব নয়। কারণ এই সাগরটি বিশাল রাশিয়ার এক প্রান্তে অবস্থিত আর রাশিয়ার জনবহুল প্রদেশগুলো ঠিক অপর প্রান্তে অবস্থিত। এছাড়া, সুবিশাল সাইবেরিয়ার বরফ আচ্ছাদিত ভূখন্ড যা রাশিয়ার জনবহুল প্রদেশকে বিচ্ছিন্ন করেছে।  

তাই দেখা যাচ্ছে যে,  চারদিকে  এত সাগর থাকলেও একমাত্র কৃষ্ণ সাগরই রাশিয়াকে সমুদ্রপথে বিশ্ব বাণিজ্যে কার্যকরীভাবে যুক্ত রাখতে সক্ষম।

কৃষ্ণ সাগর পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর একমাত্র সাগর। পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্র ইউক্রেন, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া,জর্জিয়া, মলদোভার একমাত্র সমুদ্র পথ কৃষ্ণ সাগর। এছাড়াও আরো কিছু বলকান রাষ্ট্র দানিয়ুব নদীর মাধ্যমে কৃষ্ণ সাগর ব্যাবহার করে থাকে। 

অন্যদিকে কৃষ্ণ সাগরের সাথে সবচেয়ে বেশি উপকূলীয় সীমারেখা রয়েছে তুরস্কের।   তবে তুরস্ক বাণিজ্যের জন্য শুধু কৃষ্ণ সাগরের উপর  নির্ভরশীল নয়। কারণ ম্যাপে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে কৃষ্ণ সাগর ছাড়াও তুরস্কে  ভূমধ্যসাগর, এজিয়ান সাগরের বিরাট সীমারেখা রয়েছে। তবে ভূ-রাজনীতির দিক থেকে তুরস্কের কাছে কৃষ্ণ সাগর যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। 

এর কারণ,  তুরস্কের ঐতিহাসিক প্রতিপক্ষ রাশিয়া। আর এই রাশিয়ার সমুদ্রগামী বাণিজ্যিের একমাত্র পথ হলো কৃষ্ণ সাগর। চারদিক থেকে ভূ বেষ্টিত কৃষ্ণ সাগর শুধুমাত্র বসফরাস এবং দার্দেনেলিস প্রণালীর মাধ্যমে অন্যান্য সাগরের সাথে যুক্ত হয়েছে। তুরস্ক এই প্রণালী দুটির নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়াকে যথেষ্ট   চাপে রাখতে পারে। কারণ এই প্রণালী দুটির অবস্থান তুরস্ক সিমান্তে। 

আমাদের পরবর্তি ভিডিওতে আলোচনা করা হবে কৃষ্ণ সাগরকে কেন্দ্র করে রুশ সম্রাজ্য ও তুর্কি ওসমান সম্রাজ্যের বিভিন্ন দ্বন্দ্ব এবং বর্তমান সময়ে এর কৌশলগত অবস্থান ও ভূ-রাজনীতি। এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তি কৃষ্ণ সাগরের প্রণালী দু'টির নিয়ন্ত্রণ এবং এই সম্পর্কিত চুক্তি বিষয়কও আলোচনা করা হবে। তাই সাবস্ক্রাইব ও বেল আইকনে ক্লিক করে চ্যানেল এন,আর,বি এর সাথেই থাকুন।

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.