অন্যতম রহস্যজনক স্থান ডেভিল সি: সয়তানের সাগর

 



বিপুলা এ পৃথিবীর অনেক রহস্যময় স্থান রয়েছে। তার কতটুকুই আমরা জানি, বা কতটুকুই জানার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। গহীন সমুদ্র থেকে শুরু করে পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত যেন এক অজানা রহস্যে ঘেরা। এমন একটি অজানা রহস্যময় স্থান ডেভিলস সি তথা শয়তানের সাগর।

জাপান উপকূল থেকে ৭১০ কিলোমিটার মতান্তরে ১২০০ কিলোমিটার দূরে এই সাগর অবস্থিত। স্থানটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় সঠিকভাবে এর আয়তন পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি। তবে জাপানের বনিন দ্বীপ থেকে সিলিপাইন সাগরের বেশ কিছু অঞ্চল ডেভিলস সি তথা শয়তানের সাগর নামে পরিচিত। 

অত্যন্ত ভয়ংকর ও দুর্গাম এই সাগরকে জাপানিরা মা-নো-উমি নামে ডাকে যার অর্থ শয়তানের সাগর। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই সাগরে ঘটে আসছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। চিনা পুরাণিক কাহিনীতে এসব ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়। তাদের বিশ্বাস ছিল এই সাগরের নিচে ড্রাগন বসবাস করে। 

চীনের অন্যতম শাসক চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খান বেশ কয়েকবার জাপান আক্রমণ করার চেষ্টা করে। তবে প্রতিবারই তার জাপান আক্রমণ ব্যার্থ হয়।  যে কয়েকবার কুবলাই খান জাপান আক্রমণ করতে গিয়েছিলো,  প্রতিবারই তার বাহিনী জাপানের এই ডেভিল সি অঞ্চলে মারাত্মক টাইফুন ঝরের কবলে পরে নিখোঁজ হয়ে যায়।  ১২৮০ সালে জাপান আক্রমণ করতে যাওয়া কুবলাই খানের বেশ কয়েকটি জাহাজে প্রায় চল্লিশ হাজার সৈনিক হারিয়ে যায় ডেভিল সি অঞ্চলে। 

১৯১৭ সালেও মাছ ধরতে যাওয়া বেশ কয়েকটি জাহাজ ও সামরিক যান এই শয়তানের সাগরে হারিয়ে যায়। শয়তানের সাগরে বিভিন্ন সময় হারিয়ে যাওয়া জাহাজ গুলো সন্ধানের জন্য ১৯৫২ সালে একটি অনুসন্ধানী জাহাজ পাঠানো হয় যার নাম ছিল কায়ু মারু নাম্বার-৫।  বিস্ময়করভাবে অনুসন্ধানের জন্য পাঠানো এই জাহাজটিও ১৩০ জন নাবিক সহকারে হারিয়ে যায়। 

এরপর থেকে জাপান সরকার ত্রিভুজ আকৃতির এই ডেভিল সি অত্যন্ত বিপদজনক এবং পণ্য পরিবহনের জন্য এই এলাকা পরিহারের নির্দেশ দেন। 

স্থানটি অতি রহস্যজনক ও বিপদজনক হওয়ায় ভূ-বিজ্ঞানীরা এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন সময় গবেষণা চালিয়েছেন। বিজ্ঞানী ইভান অ্যান্ডারসনের মতে জায়গাটি অতিমাত্রায় ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক প্রবণ এলাকা। পৃথিবীর বারোটি জায়গায় ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এর প্রভাব অতিমাত্রায় রয়েছে যে এলাকাগুলোকে ভাইল ভর্টেসিস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী স্থানটিতে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক প্রভাবসহ শীতল ও গরম জলের প্রতিক্রিয়া হওয়ায় সহজেই যেকোন জাহাজ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

এছাড়া স্থানটিতে জলের নিচে আগ্নেয়গিরি  রয়েছে। আগ্নেয়গিরির ফলে সমুদ্রের পানি একদিকে অতিমাত্রায় উষ্ণ আবার অন্যদিকের পানি অতিমাত্রায় শীতল হয়।  ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এর প্রভাব, উষ্ণ ও শীতল জলে নানা প্রতিকূল পরিবেশে ডেভিল সি অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে সৃষ্টি হয় ছোট ছোট দ্বীপ। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই সে দ্বীপগুলো ভেঙে আবার সাগরে বিলীন হয়ে যায়। 

এমন বিপদজনক,  প্রতিকূলময় এবং ভয়ঙ্কর এই সাগর পৃথিবীর অন্যতম রহস্যজনক  অঞ্চলের মধ্যে একটি।

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.