৯ আগস্ট আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস





আশিকুজ্জামান খান"(বান্দরবান জেলা); বিশ্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ ও চর্চাকে অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয়। ২০২১ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো-‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়; আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকারের আহ্বান। 

বিশ্বের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও তাদের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ার জন্য জাতিসংঘ ও আদিবাসী জাতি এক নতুন অংশীদারিত্ব শিরোনামে ১৯৯৩ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী বর্ষ ঘোষণা করে।


আদিবাসীদের অধিকার, মানবাধিকার ও স্বাধীনতাসংক্রান্ত বিষয়সমূহ নিয়ে ১৯৮২ সালের ৯ আগস্ট জাতিসংঘের আদিবাসী জনগোষ্ঠীবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনটিকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৯ আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অবহেলিত, সুযোগবঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসমূহের সমস্যাগুলোর ওপর মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং তাদের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা।  
এ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অধিকারবঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নামে।

দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার ও তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করে তোলা। 

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও,গাইবান্ধা, বগুড়া ইত্যাদি জেলাগুলোতে সাঁওতাল, শিং (গঞ্জু), ওঁরাও, মুন্ডারি, বেদিয়া মাহাতো, রাজোয়ার, কর্মকার, তেলী, তুরী, ভুইমালী, কোল, কড়া, রাজবংশী, মাল পাহাড়িয়া, মাহালী ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করছে।

অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং বা ম্রো, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া,বম, খুমী ও চাকগোষ্ঠী বসবাস করছে।  

বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে প্রতি বছর বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন আয়োজনে উদযাপিত হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।  

এ দিবসটি শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার দিবস নয়, দেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর সংগ্রামী জনসাধারণের অধিকার আদায়ের দিবসও বটে।  উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশ্বের ৯০টি দেশের ৩০ থেকে ৩৫ কোটি আদিবাসী উদযাপন করে থাকেন দিবসটি।
Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.