ইনকা সভ্যতার গোড়াপত্তন এবং প্রাচীন নগরী মাচু পিচু
পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালায় পরস্পর সম্পর্কযুক্ত কিছু প্রাচীন সভ্যতার উদ্ভব ঘটে। দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ সভ্যতার অন্যতম হলো ইনকা সভ্যতা। এছাড়া কারাল সভ্যতা, চাওমিন সংস্কৃতি, চাচা পোয়া , ওয়ারি সভ্যতাসহ প্রায় ১৫-২০ টি সভ্যতার সন্ধান মেলে আন্দিজ পর্বতমালায়।
আন্দিজ পর্বতমালার কোস্কো কেন্দ্রিক ইনকা সভ্যতার গোড়া পত্তন হলেও পরবর্তীতে পেরু, বলিভিয়া আর্জেন্টিনা ও চিলিসহ দক্ষিণ আমেরিকার বড় অংশ জুড়ে ইনকা সভ্যতা ছড়িয়ে পরে।
ইনকা সভ্যতা তেমনভাবে লিখন পদ্ধতি উন্নত না হওয়ায় তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায় না। তবে স্পেনীয় কিছু ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী এই সভ্যতার ব্যাপারে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
ইনকা সাম্রাজ্যের যারা শাসন করতো তাদেরকে সাপা বলা হত। পাচাকুতি ইনকা সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি ছিলেন ইনকাদের প্রথম সাপা। ইনকা সাম্রাজ্যের শেষ স্বাধীন সাপা তথা শাষক ছিলেন আতাহুয়াল্পা।
ষোড়ষ শতকে স্পেনের ফ্রান্সিস্কো পিসার্রোর ইনকা সভ্যতার শেষ শাষক আহাহুয়াল্পাকে হত্যা করে এবং তখন থেকে সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ স্পেনীয়দের হাতে চলে যায়।
ইনকারা নির্মাণে যথেষ্ট দক্ষ ছিল। প্রাচীণ সময়ই ইনকারা দারুন ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যার পরিচয় দিয়েছিল। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, মাটির ক্ষয়রোধ সহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা অনেক অগ্রসর ব্যাবস্থ্যা নিয়েছিল।
ইনকা সভ্যতার নির্দেশনাগুলো বিশেষ পাথর দ্বারা নির্মিত হলেও সেখানে কোনো রকম সিমেন্ট বা সংযোজক পদার্থ ব্যাবহার করা হয় নি। কিন্তু তারপরেও স্থানগুলো অত্যান্ত ভূমিকম্প প্রতিরোধী। এর কারণ, পাথরগুলো এমন নিখুঁতভাবে স্থাপন করা হয়েছে যেখানে তীব্র ভূমিকম্পেও পাথরগুলো বিচ্যুতি ঘটে না। শুধুমাত্র হালকা কেঁপে ওঠে।
প্রাচীন এই নগরী থেকে একটি মাত্র পবিত্র ঝর্না থেকে প্রতিটি বাড়িতে সঞ্চালনের জন্য উত্তম ব্যবস্থা ছিল।
তাদের সড়ক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত উচ্চ মানের ছিল। পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় তারা চাকা ব্যবহার না করলেও, পাহাড়ি জমিতে তারা পাহাড় কেটে এক ধরনের সিঁড়ি তৈরি করত। তারা পাথর খুব দক্ষতার সাথে কেটে বিস্তীর্ণ পাহাড়জুড়ে প্রায় ৩৯,৯০০ কিলোমিটারের সুদীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ করে। রাস্তাগুলো এতটাই উন্নত মানের যে ছয় শতাধিক বছর যাবত রাস্তাগুলো ব্যাবহৃত হওয়ার পরেও যথেষ্ট ভাল অবস্থায় রয়েছে। ২০১৪ সালে ইনকাদের তৈরি করা সড়কটি ইউনেস্কো বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত করে।
মাচু পিচু ইনকা সভ্যতার একটি নগরী ছিল। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে প্রায় ২৪ মিটার উচ্চতায় ইনকাদের মাচু পিচু শহরের অবস্থান ছিল। বর্তমান সময়ে ইনকা সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন এই মাচুপিচু। ১৯৮১ সালে পেরু তাদের এই অঞ্চলটি সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন এবং ইউনেস্কো ১৯৮৩ সালে এটিকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে। পেরুতে অবস্থিত ইনকা সভ্যতার মাচুপিচু প্রাচীন নগরীটি বিশ্বের সাতটি নতুন বিষ্ময়ের একটি।
মাচুপিচুতে ইনকাদের দ্বারা নির্মিত অন্যতম স্থাপনা হচ্ছে ইন্তিউয়াতানা যার অর্থ হচ্ছে সূর্য মন্দির, বা তিন বাতির জানালা ঘর। স্পেনীয়রা লুটের সময় এই পাথরটি তারা খুঁজেই পাইনি। ফলে ইনকাদের অন্যান্য পবিত্র নির্দেশনার মতন পাথরটি আজও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। পাথরটি নগরীতে এমনভাবে স্থাপনা করা হয়েছে যাতে শীতকালে পাথরটি সরাসরি সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। পাথরটিকে সূর্যের আক্রা বিন্দু বলা হয়। স্থানীয়দের মতে যদি কোন অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ এই পাথরে কপাল ঘষে তাহলে আধ্যাত্মিক জগত দেখতে পাবে।