তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত সম্পর্ক: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যা যা প্রদান করছে তুরস্ক
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর একটি বিশেষ কারণে তুরস্ক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে দেরি করে। তুরস্ক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৭৪ সালে, ২২ ফেব্রুয়ারি। তবে একাত্তরের পর যাই হোক না কেন, ২০০৯ সালের পর তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের একটি দৃষ্ট্রান্ত সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে তুরস্ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনিতে অটোকার কোবরা নামে একটি বিশেষ সেনাযান সরবরাহ করে। তুরস্কের এই অটোকার কোবরা বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। আফগানিস্তান যুদ্ধ, তুর্কি-কুর্দিস্তান যুদ্ধ সহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে এই অটোকার কোবরা ব্যবহৃত হয়। এমন একটি পর্যায়ের শক্তিশালী সেনা-যান বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী অনেকে।
এরপর ২০১৯ সালে সরকারি পর্যায়ের একটি সমঝোতা অনুযায়ী এ বছরের জুনে, তুরস্ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে একটি মাঝারি পাল্লার মিসাইল সরবরাহ করেছে। এই মিসাইলটির নাম TRG-300 টাইগার। ২০২০ সালে নাগার্নো কারাবাখ যুদ্ধে এই মিসাইলটি ব্যবহার করা হয়েছিল। টি.আর.জি থ্রি হান্ড্রেড টাইগার তুরস্কের তৈরি করা মাঝারি পাল্লার মিসাইল যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশ ব্যবহার করে। অপর দুই রাষ্ট্র হল আজারবাইজান ও ইউনাইটেড আরব আমিরাত।
তুরস্কের রকেটসান কর্পোরেশনের তৈরি করা এই মিসাইলটির ওজন প্রায় ২৩ টন। ৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় মিসাইলটি ক্ষেত্রবিশেষে ৯৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যে কোন বস্তুকে আঘাত আনতে সক্ষম। তুরস্ক এই মিসাইল সিস্টেম টি সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে আজারবাইজানের কাছে বিক্রি করে, এরপর ২০১৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের কাছে সরবরাহ করা হয়। ইতিমধ্যেই ১৮টি মিসাইল বাংলাদেশে পৌছেছে।
২০০৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তুরস্কের অস্ত্র রপ্তানি বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এরই অংশ হিসাবে বাংলাদেশও তুরস্ক অস্ত্রের অন্যতম ক্রেতা। বর্তমানে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে।
তুরস্ক থেকে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এফ-৭ নামের লেসার গাইড বোম্ব ক্রয় করে। এ ছাড়াও এটমাকা এন্টিশিপ মিশাইল ক্রয় করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। এই এন্টিশিপ মিসাইলটি যেকোন আবহাওয়াতেই ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া বাংলাদেশ তুরস্কের কাছ থেকে এয়ার ক্রাফট, এরিয়াল ভেহিক্যাল, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, আর্মার্ড ভেহিক্যাল, এ্যাটাক হেলিকপ্টার, আর্টিলারি সিস্টেম, ইলেকট্রিক্যাল ওয়ারকেয়ার সিস্টেম, রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম ক্রয়ের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
২০১৭ সালে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডলোড বাংলাদেশে এক সফরে অস্ত্র বিক্রি ও বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথবিনিয়োগে অস্ত্র কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।