যুক্তরাষ্ট্রে নাইন ইলিভেন সন্ত্রাসী হামলা, ইরাক যুদ্ধ একতরফা সিদ্ধান্ত যা ইসলামী চরমপন্থী উত্থানের কারণ।
শতাব্দীর বহুল আলোচিত ও দুধর্ষ সন্ত্রাসী হামলার নাম নাইন-ইলেভেন তথা সেপ্টেম্বরের হামলা। এই সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে পুরো বিশ্ব জুড়ে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয় এবং সাথে জন্ম নেয় নতুন করে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে চারটি সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে যে হামলায় প্রায় দুই হাজার ৯৯৬ জন নিহত হয় এবং ছয় হাজারের অধিক মানুষ আহত হয়, সাথে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক অবকাঠামো ও সম্পদ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
এই হামলার লক্ষ্য করা হয়েছিল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, পেন্টাগন এবং হোয়াইট হাউস। হামলাটির পিছনে যে কারণ থাকতে পারে তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইল সমর্থনসহ বিশ্বজুড়ে নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচিত নীতি।
নয় এগারোর হামলায় মাত্র ১৯ জন বিমান ছিনতাইকারী অংশগ্রহণ নেয় যারা চারটি বাণিজ্যিক বিমান ছিনতাই করে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি বোয়িং 757 এবং দুটি বোয়িং 767। বিমান চারটি ম্যাসাচুয়েটস, নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে থেকে ছিনতাই করা হয়। চারটি বিমানের মধ্যে দুটি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলা করে, একটি পেন্টাগনের পশ্চিমপাশে আর অন্যটি অবশ্য হোয়াইল হাউসে হামলা চালাতে ব্যার্থ হয়।
নয় এগারোর সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে এখন প্রর্যন্ত কোন বিস্তারিত তথ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করে নি। অভিযোগ রয়েছে হামলাটির সাথে কিছু সৌদি কর্মকর্তার যোগসূত্র ছিল বলে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার ব্যাপারে কোন তথ্য উন্মোচন করে নি।
তবে এ ঘটনাটির পর সে সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩ তম রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করে। তার এই ঘোষণা মোতাবেক তরিঘরি করে আফগানিস্তানে তালেবান ও আল-কায়েদা উৎক্ষাতের জন্যে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
তবে জর্জ ডব্লিউ বুশ তাৎক্ষণিক আফগানিস্তানে তালেবান এবং আল-কায়েদার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দুই বছর পর একটি ভুল গোয়েন্দা তথ্যের দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০০৩ সালে ইরাক দখলের সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্বজুড়ে সমালোচিত এ যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর দ্বারা ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়।
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সত্বেও এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই কিছুটা একতরফাভাবে ইরাকে আগ্রাসন চালায় বুশের প্রশাসন। ফলে বিশ্বজুড়ে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক সংকট, সাথে উত্থান ঘটে বিভিন্ন চরমপন্থীর। এই চরম পন্থিদের তালিকায় রয়েছে, আনসার আল শরীয়াহ, বোকো হারাম তথা ইসলামিক স্টেট, মুজাহিদীন, লস্কর-ই-তৈবা সহ আরও নানা পন্থি। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন চরমপন্থীদের উত্থান আরো ত্বরান্বিত হয় ইরাকে সংঘটিত হওয়া এই অন্যায় যুদ্ধের মাধ্যমে। ইরাক যুদ্ধে সংঘটিত হবার সময় নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের করা এক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে বুশ প্রশাসনের এই ইরাক যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে চরমপন্থীদের আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। এছাড়া বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব প্রতিফলিত হতে পারে।
অবশেষে ২০ বছর ধরে নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০২০ সালে আমেরিকা ও তালেবানদের মধ্যে শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে আফগানিস্তান থেকে ধাপে ধাপে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে ২৬-শে আগস্ট, ২০২১ আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলায় প্রায় ১৫০ জনের উপরে নিহত হয় যেখানে ১৩ জন মার্কিন সেনাও রয়েছে। হামলাটির দায় স্বীকার করেছে আই.এস। তবে বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আসন্ন তালেবান সরকারকে চাপ না দিয়ে, ঘটনাটির তদন্ত করে হামলাকারীদের শাস্তি দেওয়ার আস্বাস দিয়েছেন।