জমজম কূপ: সৃষ্টির অনন্য রহস্য, সৌদি আরবের পানির অন্যতম উৎস

 




পবিত্র নগরী মক্কার কাবা থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত সৃষ্টির এক রহস্য জমজম কূপ। 


সৌদি আরব মরুময় রাষ্ট্র হওয়ায়  সেখানে পানি উত্তোলন করা অনেক দুর্লভ ও ব্যায়বহুল। কিন্তু মক্কায় অবস্থিত এই জমজম কূপের মাধ্যমে আশ্চর্যজনকভাবে প্রচুর পানির যোগান দিয়ে থাকে যা মক্কার মসজিদুল হারামে আগত হজ্জ্বযাত্রীরা ব্যাবহার করে থাকে। হজযাত্রীরা প্রতিদিন প্রায় ২০ লক্ষাধিক ব্যারেল পানি উত্তোলন করে এই কৃপটি হতে। 


জমজম কূপের পানির অত্যন্ত বিশুদ্ধ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি লিটার পানিতে গ্রহণযোগ্য আর্সেনিকের মাত্রা ১০ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে জমজম কূপের আর্সেনিক মাত্রা অনেক কম। এছাড়া যথোপোযুক্ত হারে পানিতে খনিজ লবণ বিদ্যামান। 


জমজম কূপের পানি পর্যবেক্ষণের জন্য সৌদি জিওলজিক্যাল সার্ভের জমজম স্টাডিজ এন্ড রিসার্চ সেন্টার রয়েছে, যারা এই জমজম কূপের পানি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। বর্তমান শুধু মক্কাই নয়,  পুরো সৌদি আরবে  পানির চাহিদা মিটিয়ে থাকে জমজম কূপ। ২০১০ সালে সৌদি সরকার ৭০০ মিলিয়ন রিয়াল ব্যয় করে প্রতিদিন দু'লক্ষ বোতল পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা উন্নয়ন করে।  তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে জমজম কূপের পানি রপ্তানি করা হয় না। অবৈধভাবে পানি বিক্রয়ও নিষিদ্ধ। 


মরুভূমিময় রাষ্ট্র সৌদি আরবে কিভাবে এমন একটি কূপ আবিষ্কৃত হল ?


ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আল্লাহর নির্দেশে নবী ইব্রাহিম আলাহসাল্লাম  তার স্ত্রী হাজেরা আল্লাহসালাম ও শিশুপুত্র ইসমাইল আল্লাহসাল্লামকে মক্কার বিরাণভূমিতে রেখে আসে। পানির সন্ধানে হাজেরা আল্লাহসাল্লাম সাফা ও মারওয়া পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ছোটাছুটি করছিলেন।  ওই সময় জিবরাইল আল্লাহসাল্লামের পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে পানির ধারা বেরিয়ে আসে এবং শেষপর্যন্ত কূপের রূপ নেয়। স্থানটি হতে উদগীরীত পানির ধারাকে হাজেরা আল্লাহসাল্লাম জমজম তথা থামো বলে, তাই এর নাম হয়েছে জমজম কূপ। 


পরে এই কুপ বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়। প্রথম সংস্কারের কাজটি করা হয়েছিল খলিফা আল মনসুর এর সময়। তার সময়ে জমজম কূপের পাশে গম্বুজ এবং মার্বেল টাইলস বসানো হয়। তারপর খলিফা আল মাহদি এটি আরও সংস্কার করেন। 


এরপর সর্বশেষ ২০১৭-১৮ সালে সৌদি বাদশা পুনরায় সংস্কার করেন। তবে বর্তমান কাবা চত্বর হতে কূপটি দেখা যায় না। ভূগর্ভস্থ অবস্থায় রাখা হয়েছে এবং পাম্পের সাহায্যে এখান থেকে পানি উত্তোলন করা হয়। উত্তোলিত করা পানি সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারামসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়।



Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.