অন্ধকার যুগের আসল রহস্য, জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলিমদের অবদান

 


পঞ্চম শতকে রোমান অ্যাম্পিয়ারের পতনের পর এবং চতুর্দশ শতকের ইউরোপীয় রেনেসাঁ শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী সময়টিকে পশ্চিমা ইতিহাসবিদরা অন্ধকার যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। অর্থাৎ এই সময় ধরে বিশ্বে তেমন কোন বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের সম্ভব হয়নি বলে দাবি করে তারা। 



কিন্তু আধুনিক সভ্যতার কম্পিউটার থেকে শুরু করে উন্নত চিকিৎসা শাস্ত্র সহ আকস্মিক সব আবিস্কার মূলত ওই অন্ধকার যুগেরই সৃষ্টি। তাদের অন্ধকার যুগ হিসেবে আখ্যায়িত করা সময়ই হল ইসলামের স্বর্ণযুগ। অর্থাৎ এই সময়েই মুসলিম বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান পুরো বিশ্বে সমাদৃত হয়। 



ইসলামী স্বর্ণযুগে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইরাকের বাগদাদ শহরে অবস্থিত বায়তুল হিকমা যা হাউস অফ উইজডম নামে পরিচিত। আব্বাসিয় খলিফা কর্তৃপক্ষের পৃষ্ঠপোষকতায় পুরো বিশ্ব হতে পন্ডিত ও বিজ্ঞানীরা বাইতুল হিকমায় জ্ঞান চর্চা করতে আসত। তাদের পিছনে প্রচুর অর্থ খরচ করত আব্বাসীয় খলিফার শাষণ। 


ইসলামের স্বর্ণযুগে কিছু উল্লেখযোগ্য মুসলিম কৃতিত্ব ব্যক্তিবর্গ হল আবুল কাসেম আল জাহরাউন ও হুসাইন ইবনে সিনা যাদেরকে আধুনিক ওষুধের জনক বলা হয়। 


রসায়ন শাস্ত্রের অন্যতম কর্ণধার ছিলেন আবু বকর জাকারিয়া আল রাজী যিনি অ্যালকোহল ও সালফিউরিক এসিডের আবিষ্কারক।


মুহাম্মাদ বিন মুসা আল খোয়াজমি যিনি গণিত শাস্ত্রে পন্ডিত ছিলেন এবং তিনি অ্যালগরিদম,  বীজগণিত, জ্যামিতি এবং সংখ্যা তত্ত্ব আবিস্কার করেন। মূলত তাঁর অ্যালগরিদম তথ্যের উপর ভিত্তি করেই বর্তমান সভ্যতার প্রানবিন্দু ক্যালকুলেটর ও কম্পিউটার আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। 


এছাড়া আরও রয়েছেন হাসান ইবনে আল হাইসাম যিনি পরীক্ষা নির্ভর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির আবিষ্কারক, ইউরোপে তিনি আল হ্যাজেন নামে পরিচিত। ক্যামেরা অবসকিউরা, লেন্স,  ম্যাগনিফাইং গ্লাস সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তার গবেষণা করেছেন তিনি। তার উদ্ভাবিত ক্যামেরা অবসকিউর এর উপর ভিত্তি করে বর্তমান সময়ের ক্যামেরা আবিস্কার করা হয়েছে। 


এছাড়া এই সময়ে আরও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গরা হলেন মুহাম্মদ আল ইদ্রিস, আবদুর রহমান আল সূফি, ইবনে খালদুন, আল বিরুনি, নাসির আল দান তুসি, ইবনে রুশদ, ইবনে আন নাফীস সহ আরও অনেকেই। 


ধর্মীয় অনুপ্রেরণা এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চশীর পর্যায়ে পৌছানো  পর হঠাৎ ১২৫৮ সালে চীনের হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদের বায়তুল হিকমায় ধ্বংস চালানো হয় এবং মুসলমানদের বাণিজ্য পথ মোঙ্গলদের দ্বারা আক্রমণ হতে থাকে। এর ফলে মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতি বেশ প্রভাবিত হয়। এছাড়া ক্রয়োদশ শতাব্দী ও চতুর্দশ শতাব্দীতে ইমাম গাজ্জালীর মতো অতি সুফিবাদ পুনরুজ্জীবিত হওয়ার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের সৃষ্টি হয় যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির উপর বিস্তর প্রভাব ফেলে। 

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.