করোনার পরবর্তীতে স্বাভাবিকতা কেমন হবে?

হয়ত করোনা চলে গেলেও বহুদিন স্মৃতি রেখে যাবে করোনার এই মহামারি। কিন্তুু করোনা পরবর্তী ভাবনা নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই নীতি নির্ধারকদের মাঝে। সবার মনে একই প্রশ্ন করোনার পর বিশ্ব পরিস্থিতি কেমন রূপ নেবে। একমাত্র করোনা পরিস্থিতিই আমাদের নতুন জীবনযাত্রার সাথে পরিচয়ে করে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে নেক্সট নরমাল লাইফ নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে।

২০০৭-০৮ সালে অর্থনীতিবিদরা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠার জন্য প্রথম ‘নিউ নরমাল’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ‘নিউ নরমাল’ বলতে মানুষের আচরণগত পরিবর্তনকে নির্দেশ করে যে আচরণ মূলত পূর্বে অস্বাভাবিক ছিল কিন্তুু পরবর্তী অবস্থায় স্বাভাবিক ভাবেই বিবেচনা করা হয়। নিউ নরমাল মানুষের আচরণগত স্বভাব পরিবর্তনের একটি নতুন কৌশল। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বদলে যাচ্ছে দির্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা সকল ব্যবস্থা ও মানুষের আচরণ। এক দল গবেষকের মতে করোনার এই প্রাদুর্ভাব ২০২৪ সাল প্রর্যন্ত থাকবে এবং মানুষের  সামাজিক দূরত্ব আরও ২০২২ সাল পর্যন্ত মেনে চলা লাগতে পারে। মানুষ লকডাউনে ক্লান্ত হয়েই নতুন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পাশাপাশি নতুন ব্যাবস্থা ও আচরণের সাথে অভ্যস্ত হয়ে পরবে। 

সংযুক্ত নতুন আচরণের মধ্যে সমসময় মাস্ক ও গগলস পরিধান করবে মানুষ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করবে। ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে এবং যতটা সম্ভব জনসমাগম এরিয়ে চলবে। এক্ষেত্রে নতুন কাজের ক্ষেত্র যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি অফিস অটোমেশন, হোম অটোমেশনে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। আর পুরাতন আচরণের মধ্যে হারিয়ে যাবে সৌজন্যে বিনিময়, কোলাকুলি, করমর্দন, অফিস আদালতের প্রথাগত উপস্থিতি এবং প্রচলিত চাকরির ধরণ পরিবর্তনের সাথে পরিবেশ দূষণের মাত্রা লাঘব হবে। 

ইতিমধ্যেই যখন সবার শারিরীকভাবে কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই তখন বৃদ্ধি পেয়েছে ডিজিটাল প্লাটফর্মের সেবা যেমন জুম মিটিং, গুগল মিট, ফেসবুক মেসেঞ্জার, ওয়েবএক্স, গো-টু ওয়েবনার, মাইক্রোসফট মিটিং, স্টিম ইয়ার্ড, বি-স্ট্রিম, বি-লাইভের মত অনলাইন ইন্টারেক্টিব মিটিং টুলস এবং এর ব্যবহার চোখে পরার মতো।  


নেক্সট নরমাল


আমাদের মন ও মস্তিস্ক এইসব নতুনত্বের আহবানের প্রতি সাড়া দিতে শুরু করেছে এবং ধিরে ধিরে আমরা আরও এক নতুনত্ব ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সেই নতুনত্বের প্রভাব পরেছে শিক্ষা ব্যবস্থায়, ব্যবসা বাণিজ্যে, চিকিৎসা ব্যবস্থা সহ অনেক ক্ষেত্রেই। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ সেবায় প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই গুগল, টুইটারের মত জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান গুলো ঘোষণা দিয়েছে যে, ২০২১ সাল প্রর্যন্ত তাদের বেশির ভাগ কর্মিবৃন্দ বাড়িতে বসেই অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কোম্পানীগুলো মূলত জোর দিয়েছে কর্মিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, বিক্রি যতটা পারা অব্যাহত রাখা ও ক্রেতাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সাড়া দেওয়া, কোম্পানিগুলোর অর্থের প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং অংশীদার ও বিপণের গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ রাখা। 

তবে এই নতুনত্বের শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে একটি গবেষণায় যেখানে তুলে ধরা হয়েছে এই ব্যবস্থা সুদীর্ঘ ভাবে চলতে থাকলে ধনিরা আরও ধনি হতে থাকবে এবং গরিবরা আরো গরিবের দিকে চলে যাবে। তাই করোনা কেন্দ্রিক নেক্সট নিউ নরমালে নতুন একটি চিন্তার উদায় হয়েছে যে কিভাবে তৃতীয় বিশ্বের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী এই পরিবর্তনের  প্রবাহে নিজেদেরকে খাপ খাওয়াবে এবং কোন দিকেই বা যাচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ। এই বিষয়গুলো না চিন্তা করলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যায়ের আশঙ্কা  করছেন বিশেষজ্ঞগণ।



প্রতিবেদক - মো: নাফিজ করিম

সূত্র : NRB tv, লন্ডন। 

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.