সিরাজগঞ্জে কেন দলীয় সংঘর্ষ হচ্ছে?

১৫ আগষ্ট, ১৯৭৫ সময়টি বাংলাদেশীদের জন্য কালো একটি ইতিহাস যে দিনটিতে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।

তারপর সুদীর্ঘ ২১ বছর পর নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১২ জুন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ  আবার সরকার গঠন করে যে টার্মটিতে সিরাজগঞ্জ -২(সদর) আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে  জাতীয় চার নেতা ক্যাপটেন মনসুর আলীর  পুত্র মোহাম্মাদ নাসিম দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন। তারপর তিনি দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ ( কাজিপুর)  থেকে নির্বাচিত হন। অবশ্যই সপ্তম জাতীয় নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে তাৎপর্য বহুল কারণ এই নির্বাচনে যারা অবস্থান করেছেন তারা নানান প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেছিলেন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন। যে সময়টিতেই মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ সদরে অবস্থান করেছিলেন। 

সুতরাং উপরের তথ্য থেকে স্পষ্ট হয় যে সিরাজগঞ্জ -২ আসনে তার অবস্থান অনেক পুরানো এবং অত্যন্ত শক্ত। এই জন্যেই সিরাজগঞ্জ-২ আসনে বর্তমান সাংসদ ডা: হাবিবে মিল্লাত মুন্না হলেও এক দল নাসিম ভক্ত জনগণ ও তাদের নেতা রয়েছে। তবে এই বাস্তবতা জনগণকে না বুঝিয়ে নাসিম অনুসারী নেতাদের অবজ্ঞা করার প্রবণতা অনেক আগে থেকেই লক্ষ করা গিয়েছে। বর্তমানে দলীয় গঠনতন্ত্রের নামে তাদের গুরুত্বকে লাঘব করা হয়েছে। 

এই জন্যেই সিরাজগঞ্জ সদর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগে  খুব সহজেই পার্টিশন সৃষ্টি হয়েছে যা এখানকার রাজনীতিকে কিছুটা জটিল করে তুলেছে। 

এদিকে নাসিমের মিত্যুর পর তারই প্রয়াত হওয়া দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে যাবার সময় ২৬ জুন সিরাজগঞ্জ বাজারস্টেশন রোডে জেলা ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ও সরকারি হাজি কোরাপ আলি মেমোরিয়াল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি   এনামুল হক বিজয়ের উপর হামলা হওয়ার ১০ দিন পর ৬ জুলাই মিত্যুবরণ করে। এই ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের দুই সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সংগঠনের ৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধ সদর থানায় মামলা করে এনামুল হকের বড় ভাই রুবেল। মামলায় এজাহারভূক্ত আসামীদের মধ্যে ৩ জন জেল হাজতে থাকলেও প্রধান আসামী পলাতক এবং একজন জামিনে রয়েছে। ইতিমধ্যেই ২৮ জুন হামলায় জরিত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিস্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।   এর পূর্বেও সিরাজগঞ্জে ৭-৮ জনের উপর রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হয়েছে যেগুলোর বিচার এখনো না হওয়ায় এমন ঘটনার বার বার পূনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সিরাজগঞ্জের  এক সিনিয়র নেতা।  এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার,  ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয় যাতে ২০ জন হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে বুধবার সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের অনুরোধে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় বন্ধ  করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আওয়ামী লীগ। 

                              ছবি : এনামুল হক বিজয় 
                               সূত্র : ফেসবুক 


তবে যে বা যারাই সংঘর্ষে জরিয়েছেন তারা যে মূলত আওয়ামী লীগের বিস্বাস ও মূল্যবোধকে আঘাত করেছেন এই কথা অনিস্বিকার্য। কারণ নাসিম অনুসারী নেতা হন অথবা মুন্না অনুসারী নেতা হন-- আপনারা একই বিস্বাস ও মূল্যবোধকে ধারণ করেন সেটা হলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ।

তবে বর্তমান সিরাজগঞ্জ সদর আসন সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তথাকথিত দিনাজপুর, শিবগঞ্জ, মাগুরা, সিলেট, চট্রগ্রাম ইত্যাদি নানা জেলায় আওয়ামীলীগের ভিতর অন্তকন্দল রয়েছে যা সবই পার্টিশন কেন্দ্রিক এবং ভিন্ন ভিন্ন সময় এই পার্টিশন থেকেই সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে।


যে কোন সংঘর্ষেই বিস্বাস ও মূল্যবোধের বৈচিত্রতার  পাশাপাশি রাজনৈতিক স্বার্থ থাকে তবে একই দলের ভিতর পারস্পরিক দ্বন্দ্বে বিস্বাস ও মূল্যবোধ অভিন্ন হলেও রাজনৈতিক স্বার্থই গুরু মনে হচ্ছে এবং এতে আরও যুক্ত হতে পারে  দৃষ্টিভঙ্গি ও আচারণের ভিন্নতা। 
 
যে কোন সংঘর্ষেই দুইটি পক্ষের মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া হয় এবং উভয় পক্ষের মধ্যেই আপসহীন অবস্থা থাকে। আমরা যার যার স্থান থেকে যত তারাতা‌ড়ি আপসহীন অবস্থা থেকে সরে দাঁড়াতে পারবো ততটা তাড়াতাড়ি আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারবো এবং গোটা সমাজ ততটা তাড়াতাড়ি  শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।

এই ক্ষেত্রে সবার আগে আপসহীন অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াতে হবে তাদেরকেই যারা দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। 

































Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.