ভয়ানক ডেথ ভ্যালি : পৃথিবীর মৃত্যুর উপত্যকা
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ও নেভাডা অঙ্গরাজ্যের সীমানায় অবস্থিত ভয়াবহ এক স্থান — ডেথ ভ্যালি, অর্থাৎ “মৃত্যুর উপত্যকা”। পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ, শুষ্ক ও প্রাণহীন জায়গাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। ১৯১৩ সালের জুলাই মাসে এখানেই রেকর্ড করা হয়েছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা — ৫৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন ভয়ানক উত্তাপে বাতাস যেন জ্বলন্ত আগুনের ঢেউ হয়ে বয়ে যায়। দিনে মাটির তাপমাত্রা এত বেশি হয়ে ওঠে যে, সেখানে পা রাখাই কষ্টকর।
ডেথ ভ্যালির ভূপ্রকৃতি এক অদ্ভুত মিশ্রণ—লবণাক্ত সাদা সমতল ভূমি, কালচে আগ্নেয় পাহাড়, আর বিস্তীর্ণ মরুভূমির ঢেউ। এখানে গাছপালা প্রায় নেই বললেই চলে। পানির উৎস অতি সীমিত, তাই জীবজগতের অস্তিত্বও ক্ষীণ। প্রখর তাপ, বিষাক্ত বাতাস, আর নিস্তব্ধ পরিবেশ এই অঞ্চলকে এক ভয়ংকর নির্জন রাজ্যে পরিণত করেছে।
তবে এখানকার রহস্য এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞানীদের দীর্ঘ গবেষণায়ও আজও পুরোপুরি ব্যাখ্যা মেলেনি ‘সেলসা রকস’-এর রহস্য—যে পাথরগুলো কোনো মানুষের ছোঁয়া ছাড়াই নিজে নিজে সরে যায়। রাতে অনেক অভিযাত্রী অদ্ভুত শব্দ ও প্রতিধ্বনি শুনেছেন, যেন মৃত আত্মারা বালুর নিচে ফিসফিস করছে। এ কারণেই স্থানীয়রা একে ‘মৃত্যুর আত্মার উপত্যকা’ বলে ডাকে।
তবুও, ভয় ও রহস্যের মাঝেও ডেথ ভ্যালি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। সূর্যাস্তের সময় পাহাড়ের লালচে ছায়া, সোনালি বালুর ঢেউ আর আকাশভরা তারার দৃশ্য যেন ভয়ের ভেতর লুকানো এক অপূর্ব সৌন্দর্য উপহার দেয়।
ডেথ ভ্যালি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রকৃতি যেমন মোহনীয়, তেমনি নির্মমও হতে পারে। এখানে দাঁড়িয়ে মানুষ উপলব্ধি করে নিজের অসহায় ক্ষুদ্রতা—যেখানে জীবন, মৃত্যু ও নিস্তব্ধতা মিশে আছে এক ভয়াল সৌন্দর্যের রহস্যময় সুরে।