হঠাৎ কেন তেলের দাম বৃদ্ধী? বাংলাদেশ কি শ্রীলঙ্কার পথে?
শ্রীলঙ্কার মতো রাজনৈতিক অস্থিরতার কোনও ইঙ্গিত নেই তো? বাংলাদেশ সরকার পেট্রোপণ্যের দাম এক ধাক্কায় ৩০-৪০ টাকা বাড়িয়েছে। এটি কি তাহলে শ্রীলঙ্কার মতো রাজনৈতিক অস্থিরতার কোনও ইঙ্গিত দিচ্ছে??
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় আর্থিক সঙ্কটের সূচনার প্রাথমিক বার্তাও এসেছিল জ্বালানির তেলের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমেই।
চিনা তহবিলপুষ্ট প্রকল্প আর ঋণগ্রহণে ব্যস্ত ছিলেন শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট। রাজাপক্ষের সরকার বিষয়টি নিয়ে তেমন কোন গুরুত্বই দেয় নি।
কিন্তু খুব দ্রুতই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি আর গণপরিবহণের ভাড়ার হার বাড়তে থাকায় শ্রীলঙ্কায় তৈরি হয় জনবিক্ষোভ।
মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সিলোন পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন’ এক ধাক্কায় পেট্রলের দাম ৮২ টাকা এবং ডিজেলের দাম ১১১ টাকা বাড়ানোর কথা ঘোষণা দেয়।
শ্রীলঙ্কার শক্তি বিষয়ক মন্ত্রী কাঞ্চনা এই বিষয় জানায় যে, বিপুল লোকসান সামাল দিতেই বাধ্য হয়ে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শনিবার বাংলাদেশ লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা এবং ডিজেলের ৩৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা করে, একই যুক্তি দিচ্ছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক দফতর। জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) গত ছয় মাসে পেট্রোপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকারও বেশি লোকসান করেছে। তা সামলাতেই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
শেখ হাসিনা সরকারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘‘নিরুপায় হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।’’পেট্রোল-ডিজেলের পাশাপাশি পরিবহণ ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত অকটেনের দামও লিটার প্রতি ৪৬ টাকা বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানি তেলে ‘রেশনিং’ ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে । অর্থ্যাৎ, মোটরবাইক এবং গাড়ি-পিছু সর্বোচ্চ কত লিটার জ্বালানি কেনা যাবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার আর্থিক সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে বিপুল বৈদেশিক ঋণকে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। অনূরূপভাবে, বাংলাদেশেও বিদেশি ঋণ বাড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ ছিল ৪,৫৮১ কোটি ডলার। এই ঋণ এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯,৩২৩ কোটি ডলারে।
এই বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ শোধ করতে গেলে বাজারে চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই উপযুক্ত সময়ে রাজকোষ রক্ষা না করতে পারলে, দেশের অর্থনীতি ভয়াভহ অবস্থানে পৌছতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশের বণিকমহলের একাংশ।
তবে রাজাপক্ষের মতো কখনওই রাজকোষ শূন্য করে, রাজনীতি করার ইতিহাস নেই শেখ হাসিনার। তাই তাঁর পক্ষে অনেক দৃঢ় ভাবে আর্থিক পরিস্থিতির হাল সামলানো সম্ভব বলে অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন।
তাঁদের মতে, এমনটাও হতে পারে যে পরিস্থিতি যাতে শ্রীলঙ্কার মতো না হয়, তার জন্য আগেভাগেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সঙ্কটের মোকাবিলায় যথেষ্ট অর্থ ও শক্তি থাকবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে।