মালদ্বীপ: নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ

 




নয়নাভিরাম সামুদ্রিক  সৌন্দর্য বেষ্টিত অপরূপ দেশ মালদ্বীপ। প্রকৃতি যেখানে পাখা মেলেছে অবারিত স্বাধীনতায়। আর এ কারণেই মালদ্বীপে প্রতিবছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে লাখ লাখ পর্যটক মালদ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে।  পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র মালদ্বীপেই বিশালাকায় সাবমেরিনে করে সমুদ্র তলদেশে ভ্রমণের ব্যাবস্থা রয়েছে। 

শ্রীলঙ্কা হতে আনুমানিক ৪০০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত মালদ্বিপে রয়েছে বিরল প্রজাতির পাখি কাটা পক্ষী। এক ঋতুর দেশটিতে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম মিলে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার ছোট ছোট দ্বীপ। এ দ্বীপগুলোর সমন্বয়েই সৃষ্টি মালদ্বীপ।  

মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে তৈরি হয়েছে অত্যাধুনিক মালে ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। এছাড়া মালদ্বীপের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে পর্যটকরা অনায়াসে ছুটে বেড়াতে পারেন এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে। ১৯৮৯ সালে দেশটির সরকার প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ সময় বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদারনীতি গ্রহণ করা হয়।

এরই ধারাই এইখানে গড়ে উঠেছে অত্যন্ত উন্নত মানের হোটেল ও রিসোর্ট। উল্লেখযোগ্য হোটেল গুলোর মধ্যে রয়েছে সামারসেট

ইন, দা মেলরসে , হোটেল জেন মালে, হাোটেল ওক্টেভ ইত্যাদি।  আর রিসোের্টের মধ্যে কুরুম্বা মালদিপ, হলিডে

আইল্যান্ড রিসোর্ট, প্যারাডাইস আইল্যান্ড রিসোর্ট, সান আইল্যান্ডসহ আরও অনেক। 

মালদ্বীপের একটি রিসোর্টের নাম রাঙ্গালিয়া। এতে রয়েছে পানির নিচে বিশেষ রেষ্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টিতে  একবেলা খাবার খেতে ব্যয় হয় এক হাজার ইউএস ডলার। দাম এত উচ্চ হওয়ার পরও রেষ্টুরেন্টটিতে পর্যটকদের প্রতিনিয়ত ভীড় জমেই থাকে ।

মালদ্বীপে আসা বাংলাদেশি পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ মালদ্বীপের রাজধানী মালের বড় মসজিদটি। বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশার-এর সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছিল মালের বড় মসজিদটি।

প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পর্যটকদেও ভীড় থাকে এই মসিজদটি দেখার জন্য। এছাড়া মালদ্বীপে বহু বছরের পুরানো অনেক ছোট ছোট মসজিদ আছে যা পর্যটকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। মালদ্বীপের জাদুঘর পৃথিবীর সমৃদ্ধ জাদুঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম।

মালদ্বিপের অন্যতম আকর্ষণ সাবমেরিনে করে সমুদ্র তলদেশে ঘোরা যা পর্যটকদের ১২০ ফুট গভীর সমুদ্র তলদেশ পর্যন্ত নিয়ে যায়। পৃথিবীর আরেক সুন্দর জগত গভীর সমুদ্র তলদেশে বিশাল বিশাল মাছ, গাছ গাছালি, ভয়ংকর প্রাণি, উঁচু-নিচু পাহাড় দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমনকারীরা। 

সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এখানে রয়েছে সাফারিবোর্ট।  উপকূল থেকে পর্যটকদের নিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে যা ভ্রমন পিপাসুদের দেয় অনাবিল আনন্দ।

মালদ্বীপের অন্যতম বিস্ময় হল সমুদ্রের মাঝখানে স্কয়ার সাইজের কয়েক কিলোমিটার জায়গা। যেখানে নেই কোন সাগরের ঢেউ। মনে হয় পুকুরের পানির মত নীরব হয়ে আছে। এইসব স্থানে পর্যটকরা নির্ভয়ে সাতার কাটে। স্পিডবোটে চড়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠেন সবাই। 

মালদ্বীপের বর্তমান জনসংখ্যা তিন লাখের কিছু বেশি। দেশটিতে রয়েছে তাদের পুরানো স্থানীয় মুদ্রা, বিশাল বিশাল মাছের কংকাল, মালদ্বীপের লোকজ শিল্পের সংগ্রহ। মালদ্বীপ শতভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ। দেশটিতে অমুসলিমদের কোনো ভোটাধিকার নেই। 

২০০৮ সালের সংবিধানের ৯ ধারার ডি অনুচ্ছেদের একটি সংশোধনীতে বলা হয় কোন অমুসলিম মালদ্বীপের নাগরিকত্ব পাবে না।

 ১২তম শতাব্দীতে এই দ্বীপটি বৌদ্ধ ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী কার্যকরভাবে সবাই মুসলমান। মরক্কোর পরিব্রাজক ইবনে বতুতার মতে, মালদ্বীপে ইসলাম্ এসেছে এজিনি সুন্নি মুসলিম পরিব্রাজকের দ্বারা যার নাম আবু আল বারাকাত যিনি মরক্কো থেকে এসেছিলেন।

দেশটিতে বর্তমানে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সরকারপ্রধান। প্রেসিডেন্টই ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের নিয়োগ দেন। প্রেসিডেন্ট পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

দেশটির প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন। দ্বিতীয় আয় হচ্ছে মাছ ও মাছজাত পণ্য রফতানি।

সাগর থেকে মাছ ধরে বিদেশে রফতানি করে হাজার হাজার ডলার আয় করে দেশটি।  দেশটিতে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার প্রবাসী শ্রমিক কাজ করছে যেখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.