বাংলাদেশের চর অঞ্চল ও যমুনা নদী
নদীর মোহনায় পলি সঞ্চয়নের ফলে গড়ে ওঠা ভূভাগকে চর বলা হয়। বাংলাদেশে চরভূমির মোট পরিমাণ প্রায় ১,৭২২ বর্গ কিমি। বাংলাদেশের চরগুলিকে পাঁচটি উপ-এলাকায় ভাগ করা হয়েছে, যথা: যমুনা নদী, গঙ্গা নদী, পদ্মা নদী, আপার মেঘনা এবং লোয়ার মেঘনা নদীর চরসমূহ। এ সকল চর ছাড়াও অন্যান্য চর রয়েছে যেমন, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী এবং তিস্তা নদীর চরসমূহ।
যমুনা নদী প্রবাহে বিভিন্ন আয়তনের চর গড়ে উঠেছে। ১৯৯২ সালে শুষ্ক মৌসুমে তোলা ল্যান্ডস্যাটের প্রতিচ্ছবি থেকে দেখা যায়, যমুনা নদীতে ৫৬টি বৃহৎ চর আছে যাদের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ৩.৫ কিমি-এরও বেশি। এগুলি ছাড়াও আরও ২২৬টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চর গড়ে উঠেছে যাদের দৈর্ঘ্য ০.৩৫ এবং ৩.৫ কিলোমিটারের মধ্যে। এ সকল চরের বেশিরভাগই বালুসমৃদ্ধ এবং উদ্ভিদ আচ্ছাদিত।
যমুনার যে অংশ থেকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী শাখায়িত হয়েছে সে অংশে তথা সিরাজগঞ্জের উত্তর ও পূর্বে এবং গঙ্গার উজানে সর্বদক্ষিণ প্রবাহে ধারাবাহিকভাবে চর গঠিত হয়েছে। যমুনা সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে ৩৬টি চরে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি মানুষের বাস। এই চরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চরগুলো হল - নাটুয়ারপাড়া চর, চর রূপসা, চর মেসড়া, জজিরার চর, বান কি মুন চর, পীরগাছা, রঘুনাথপুর, চরগিরিশ, খাসরাজবাড়ী, চরছিন্না, সানবান্ধা ইত্যাদি।
যেখানে নদীর প্রশস্ততা ১২ থেকে ১৫ কিমি, সেখানে প্রশস্ত এবং দীর্ঘ দ্বীপচর দৃশ্যমান হয়। নদীর পরিবহন ক্ষমতার তুলনায় বাহিত পলির পরিমাণ অত্যধিক হওয়ায় পলিরাশি ধীরে ধীরে নদীগর্ভের বিভিন্ন স্থানে সঞ্চিত হয়।
যমুনা নদী প্রতি বছর গড়ে ১২৫ মিটার হারে প্রশস্ততা লাভ করেছে। এর ফলশ্রুতিতে বিগত ২৭ বছরে যমুনা নদীতে অব্যহতভাবে একই সাথে চর গঠন প্রক্রিয়া এবং নদীর প্রশস্তায়ন প্রক্রিয়া সক্রিয় রয়েছে।
এক হিসাব অনুযায়ী চরসমূহের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬,৩১,০০০। এর বেশিরভাগই তথা প্রায় ৬৫ শতাংশ যমুনা নদীর বিভিন্ন চরের অধিবাসী।
ভাঙাগড়া আর প্লাবনের সাথে চরের অধিবাসীদের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতি বছর চরগুলির একটি বিরাট অংশ বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। আগাম বন্যা সংঘটিত হলে চরের জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে চরের অধিবাসীরা সাধারণত সহজলভ্য উঁচু জমিতে তাদের বসত গড়ে তোলে।
মূল ভূমির সঙ্গে সংযুক্ত চরের তুলনায় দ্বীপ চরগুলি অধিকতর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। চর অঞ্চলের প্রায় ৬০% মানুষ কোন না কোন ভাবে নদীভাঙনের শিকার হয়।