সাহারা মরুভূমি: এক বালির রাজ্য। প্রতি বিশ বছর পর পর এটি তৃণভূমিতে পরিণত হয়।
সাহারা মরুভূমি সোনালি বালির এক অপরূপ রাজ্য । পৃথিবীর সর্ববৃহৎ উষ্ণ মরুভূমি এবং আয়তনের দিক থেকে ৩য় বৃহত্তম মরুভূমি। মরুভূমি বলতে সেই সব এলাকাকে বুঝায় যেখানে বৃষ্টিপাতের হার বছরে ১০ ইঞ্চির কম হয়ে থাকে।
উত্তর আফ্রিকার বৃহদাংশ জুড়ে সাহারা মরুভূমির রাজত্ব। এই রাজত্বের পূর্বে লোহিত সাগর, উত্তরে মেডিটেরিয়ান সাগর এবং পশ্চিমে আছে আটলান্টিক সাগর। দক্ষিণে এই সীমানা ধরা হয়েছে সাহেল পর্যন্ত, এক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রায়-অনুর্বর শুষ্ক অঞ্চল। আলজেরিয়া, চাদ, মিশর, লিবিয়া, মালি, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, নাইজার, পশ্চিম সাহারা, সুদান এবং তিউনিসিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল জুড়ে সাহারা মরুভূমি। বালির রাজ্য হলেও সাহারা মরুভূমির অনেকগুলো অংশ রয়েছে যেখানে কিছু পর্বতমালা এবং তৃণভুমি আছে।
উত্তর আফ্রিকার ৩১% অংশ জুড়ে সাহারা মরুভূমি অবস্থিত। এর আয়তন ৯ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার বা ৩,৫০০,০০০ বর্গমাইল। সাহারা মরুভূমির মোট আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তনের প্রায় সমান।
সাহারা মরুভূমিকে কয়েকটি অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়- পশ্চিম সাহারা, তিবেস্তি পর্বতমালা, এয়ার পর্বতমালা, তিনেরি মরুভূমি এবং লিবিয়ান মরুভূমি।
সাহারা মরুভূমি সবসময় কিন্তু মরুভূমি ছিল না। ১০,০০০ বছর আগে সাহারার আবহাওয়া অপেক্ষাকৃত আর্দ্র ও শীতল ছিল। সাহারা মরুভূমিতে বেশ কিছু হ্রদ ও ছোট নদীর অবস্থানের প্রমাণ পাওয়া যায়। আইস এজ এর পর সাহারার চিত্র আজকের শূন্য এবং শুষ্ক মরুভূমিতে পরিণত হয়।
মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে মাত্র দেড়শ কিলোমিটার দূরে সাহারা মরুভূমির একটি অংশের নাম ওয়াদি আল হিতান। আরবি ভাষায় ওয়াদি আল হিতান অর্থ তিমির উপত্যকা। প্রায় ৩৬ লক্ষ বছর আগে বিলুপ্ত ডোরাডান প্রজাতির তিমির জীবাশ্ম পাওয়া গেছে এখানে। সাহারা মরুভূমি যে অতীতে সমুদ্র ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই ওয়াদি আল হিতান। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম এখানেই পাওয়া গেছে।
সমুদ্র থেকে মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার পরও বহুবার সাহারা মরুভূমি সজীব হয়ে উঠেছে। প্রতি ২০ হাজার বছর পর পর সাহারা মরুভূমি জলাভূমি ও তৃনভূমি তে পরিণত হয়। এর কারণ হল পৃথিবী তার নিজ অক্ষপথে প্রতি বিশ হাজার বছর পর পর সামান্য উত্তরে কাত হয়ে যায়। এরফলে পৃথিবীর মৌসুমী বায়ুর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। আর ঠিক সে সময়কালে সাহারা মরুভূমিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং এ অঞ্চল সবুজে পরিণত হয়। সর্বশেষ ৫ থেকে ৭ হাজার বছর আগে সাহারা অঞ্চলে মানুষ ও পশুপাখির বসবাস ছিল। ধারণা করা হয় ১৫ হাজার বছর পর সাহারা মরুভূমি আবারও সবুজ হয়ে উঠবে।
সাহারা মরুভূমিতে অধিকাংশই যাযাবর শ্রেণীর মানুষ বাস করে । তারা ছাগল, ভেড়া, ও উট পালন করে এবং জলের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায়। খেজুর, গম, বার্লি ইত্যাদি চাষ করে তারা জীবনযাপন করে । স্থানীয় তুয়ারেগ জাতির মানুষেরা বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।
সাহারা মরুভূমির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাণী হলো উট। যাযাবর ও পণ্যবাহকেরা যাতায়াতের জন্য উট ব্যবহার করা হয় । একে ‘মরুভূমির জাহাজ’ বলা হয়। সাহারা মরুভূমিতে সাপ, গিরগিটি ও খেঁকশিয়ালের মত প্রাণী বাস করে। ৭০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৯০ প্রজাতির পাখি, ১০০ প্রজাতির সরীসৃপ আর কিছু আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীর বসবাস করে সাহারা মরুভূমিতে।