অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাগর লোহিত সাগর: ছয়টি দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল যেখানে
বিশ্বের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সাগর লোহিত সাগর যে সাগরটি এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশকে পৃথক করেছে।
লোহিত সাগরের এক বিশেষ ধরণের ব্যাকটেরিয়ার আছে, এই ব্যাকটেরিয়াগুলো নাইট্রোজেন গ্রহণ করে এক প্রকার যৌগ গঠন করে । যার ফলে এই সাগরের রং লাল হয়। এই জন্যে একে লোহিত সাগর বলা হয়।
লোহিত সাগরের আয়তন প্রায় চার লক্ষ ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার। এর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৯০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩৫৫ বর্গ কিলোমিটার।
লোহিত সাগরের দক্ষিণে বাব এল মান্দেব প্রণালী ও এডেন উপসাগর রয়েছে। বাব এল মান্দেব প্রণালী ও এডেন উপসাগরের মাধ্যমে লোহিত সাগর ভারত মহাসাগরে পতিত হয়েছে।
সাগরটির উত্তরাংশে সিনাই উপদ্বীপ, আকাবা উপসাগর এবং সুয়েজ উপসাগর অবস্থিত।
লোহিত সাগরের দুইপাশে প্রায় ছয়টি দেশের অবস্থান। এ দেশগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, ইয়েমেন, মিশর, সুদান, ইরিত্রিয়া ও জিবুতি।
লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী ছয়টি দেশ এসক্লুসিভ ইকোনমিক জোন গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। যার ফলে, লোহিত সাগর অঞ্চলের উপকূলবর্তী প্রায় ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এসক্লুসিভ ইকোনমিক জোন গড়ে ওঠবে ভবিষ্যতে । আয়তনের দিক থেকে ইকোনমিক জোনটি প্রায় তিনটি বাংলাদেশের থেকেও বড়। এসক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের মধ্যে সৌদি আরবের এক লক্ষ ৮৬ হাজার ৩৯২ বর্গ কিলোমিটার। সুদানের ৯২ হাজার ৫১৪ বর্গ-কিলোমিটার। মিশরের ৯১ হাজার ২৭৯ বর্গ-কিলোমিটার। ইরিত্রিয়ার ৭৮ হাজার ৩৮৪ বর্গ-কিলোমিটা। ইয়েমেনের ৩৫ হাজার ৮৬১ বর্গ-কিলোমিটার। এবং জীবুতির ৭ হাজার ৩৭ বর্গ-কিলোমিটার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন রয়েছে।
সৌদি আরব তাদের এসক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে ২০২৩ সালের মধ্যে একটি উচ্চবিলাসী ট্যুরিজম স্পট গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। বিশ্বের ধনী ও উচ্চবিলাসী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সৌদি আরব ট্যুরিজম স্পটটিতে অত্যন্ত মনোরম পরিবেশের সাথে দৃষ্টিনন্দনীয়ভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। ২০২৩ সালের মধ্যে এরকম একটি উচ্চবিলাসী পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য সৌদি আরব লোহিত সাগর অঞ্চলে ৯০ টি বিশেষ ধরনের দ্বীপ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সৌদি আরবের অর্থনৈতি আরও স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি তাদের উপকূলীয় মরৃময় অঞ্চল একটি বর্তিষ্ণু পরিবেশে উন্নতি হবে।
এছাড়া, সাগরটিতে প্রশস্ত মহীসোপান রয়েছে। প্রশস্ত মহীসোপান থাকায় লোহিত সাগরে বিচিত্র সামুদ্রিক প্রাণী এবং প্রবালের উপস্থিত রয়েছে।
মহীসোপান মূলত কোন স্থলভাগের নিকটবর্তী অগভীর সামুদ্রিক অঞ্চল। যেকোনো মহীসোপানের গভীরতা সাধারণত ৫০০ থেকে ৬০০ ফুটের মতো হয়। মহীসোপান অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত বিচিত্রপূর্ণ হয়। লোহিত সাগরের মহীসোপান বেশ প্রশস্ত হওয়ায় এ সাগরে রয়েছে বিচিত্র ধরনের জলজ প্রাণী। এই সাগরে প্রায় ১,০০০ প্রজাতির অমেরুদন্ডী প্রাণী ও ২০০ রকমের নরম ও শক্ত প্রবালের বাস।
লোহিত সাগর এবং ভূমধ্যসাগর কে যুক্ত করেছে সুয়েজ খাল। লোহিত সাগরের উত্তরে সুয়েজ খালের অবস্থান। এশিয়ার সাথে ইউরোপের সমুদ্র পথের দূরত্ব কমাতে সুয়েজ খালটির খনন সম্পূর্ণ হয় ১৮৬৯ সালে।
ইউরোপের সাথে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যাতায়তের জন্যে লোহিত সাগর ব্যবহার করা হয়। যার ফলে বিশ্বের সমুদ্র বাণিজ্যের প্রায় ১৫% লোহিত সাগরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই লোহিত সাগরকে বিশ্ববাণিজ্যের ধমনি বলা হয়। লোহিত সাগরের জলে লবণাক্ততার মাত্রা ৩.৮% । এর কারণ, লোহিত সাগরের উপকূল অঞ্চলগুলো অত্যন্ত মরুময় হওয়ায় সাগরের পানি বাষ্পীভূত হয়। যার ফলে এই সাগরের লবণাক্তের মাত্রা বেশি। বহু বছর আগে একটি সরু উপসাগরের মাধ্যমে লোহিত সাগর মৃত সাগরের সাথে যুক্ত ছিল।