দক্ষিণ চীন সাগর: এশিয়ার বিরোধপূর্ণ এক অঞ্চল

 



ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের ভৌগলিক, রাজনৈতিক  ও বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল দক্ষিণ চীন সাগর। দক্ষিণ চীন সাগর কে কেন্দ্র করে চীনের সাথে দেখা দিয়েছে একাধিক রাষ্ট্রের বিরোধ। 

ভিয়েতনামে, মালয়েশিয়ার, তাইওয়ান, ব্রুনাই ও ফিলিপাইনের সঙ্গে এ বিরোধে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ও জাপান। 

ভৌগলিক ও কৌশলগতভাবে চীন সাগর কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ?

এশিয়া হতে ইউরোপ ও আফ্রিকায় পণ্য  পরিবহনের ক্ষেত্রে সংযোগস্থল হিসাবে ব্যবহৃত হয় ব্যাস্ততম এই সমুদ্র অঞ্চল।  বৈশ্বিক তেল বাণিজ্যের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে পরিবহন করা হয়।  

এছাড়া চীনের আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে 

সিংহভাগ পণ্য এই অঞ্চল দিয়ে পরিবহন করা হয়। যেখানে মালাক্কা প্রণালীও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্বের ১০ ভাগ মৎস্য সংগ্রহ দক্ষিণ চীন সাগরে করা হয়। 

এছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকেও অঞ্চলটির গুরুত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ চীন সাগরে প্রায় ১১ বিলিয়ন গ্যালন তেল ও ১৫০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদ রয়েছে। 

তবে চাইনিজে কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ চীন সাগরে প্রায় ১২৫ বিলিয়ন গ্যালন তেল এবং ৫০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে।  

দক্ষিণ চীন সাগরে কেন সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে ?


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩৭ সালে জাপান চীন কে আক্রমণ করে এবং দক্ষিণ চীন সাগর জাপান দখল করে নেয়। 

 কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে  কায়রো ও পটসডাম চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ চীন সাগর আবার চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।  

 এই দুটি চুক্তির মাধ্যমে দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় ৯০% চীনের অধীনে রয়েছে। এরই আলোকে ১৯৪৭ সালে চীন সরকার নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে যে মানচিত্রটিতে ১১ টি ড্যাশলাইনের মাধ্যমে দক্ষিণ চীন সাগরের সিমানা নির্ধারণ করা হয়। ১৯৫৩ সালে ১১ টি ড্যাশলাইন সরলীকরণ করে ৯ টি ড্যাশলাইন করা হয়। 

 কিন্তু জাতিসংঘের সমুদ্র আইন অনুযায়ী কোন রাষ্ট্র তাদের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সামুদ্রিক অঞ্চল তাদের নিজেদের অঞ্চল হিসেবে দাবি করতে পারে।  

 আর ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অঞ্চলকে এসক্লুসিভ ইকোনমিক জোন হিসেবে তারা ব্যবহার করতে পারে। জাতিসংঘের এমন সমুদ্র আইনের ফলে দক্ষিণ চীন সাগরে যে পাঁচটি  রাষ্ট্র রয়েছে, সবাই তাদের ভৌগলিক সীমানার সার্বভৌমত্ব দাবি করে এবং চীনের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পরে। চীন বিরোধী এই রাষ্ট্রগুলোকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। গেল বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠন করা হয় কোয়ার্ড জোট। 

তবে, শী জিন পিং এর নেতৃত্বে ২০১৩ সাল হতে  ব্যাপকহারে দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে চীন।  দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ এবং সেখানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন,  পারমানবিক বোমা সমৃদ্ধ যুদ্ধজাহাজসহ বিভিন্ন প্রকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী সামরিক পরিকল্পনা নিয়েছে চীন। 

দ্বীপগুলো হচ্ছে সুবি রিফ, মিশচিফ রিফ, জনসন সাউথ রিফ, হিউজেস রিফ, গেভেন রিফ, ফিয়েরি ক্রস রিফ ও কোয়ারটেরন রিফ।

ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলে বহুমুখি শক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা অঞ্চলটিতে নিরাপত্তা ঝুকি বাড়িয়ে তুলেছে। তবে, বিশ্ব বাণিজ্যের স্বার্থে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে আসিয়ান জোটটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.