বিশ্বে ৫০-টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে। বিভিন্ন দেশে রাজনীতিতে অন্যতম ডি ফ্যাক্টো ধর্ম

 


যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে ৫০ টি দেশ তাদের ধর্মকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ৫০ টি দেশের মধ্যে ২৭ টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। 

আর বিশ্বে প্রায় ২০ টি দেশের রাষ্ট্র ধর্ম হচ্ছে খ্রীষ্টান। ভুটান ও কম্বোডিয়ার রাষ্ট্র ধর্ম হচ্ছে বৌদ্ধ। আর বিশ্বে একমাত্র ইহুদি ধর্ম হচ্ছে ইসরাইলের রাষ্ট্রধর্ম। পুরো বিশ্বে ইসলাম, খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মের রাষ্ট্র থাকলেও এখন পর্যন্ত হিন্দু ধর্মের কোন রাষ্ট্র ধর্ম নেই।

রাষ্ট্র ধর্ম খ্রিস্টান যে দেশগুলো --- আর্মেনিয়া,  কোস্টারিকা,  ডেনমার্ক, ইংল্যান্ড ইথিওপিয়া,  ফারো দ্বীপপুঞ্জ, জর্জিয়া,  গ্রিস হাঙ্গেরি, আইসল্যান্ড, লিচেনস্টাইন, মাল্টা,  মোনাকো, নরওয়ে, সামোয়া, সার্বিয়া, টঙ্গো, টুভালু, জাম্বিয়া ও ভাটিকান সিটি। 

এবং, 

যে দেশগুলোতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সে দেশগুলো হল --- আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, বাহরাইন,  বাংলাদেশ, ব্রুনাই, ক্যামেরুস,  জিবুতি, মিশর, ইরান-ইরাক, জর্ডান,  কুয়েত লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বিপ, মরিশাস, মরক্কো, ওমান, প্যালেস্টাইন, কাতার,  সোমালিয়া, তিউনিসিয়া, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, ইয়েমেন এবং সৌদি আরব। 

এছাড়া চারটি দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম না হলেও  ইসলামকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এই চারটি দেশগুলো হলো তুরস্ক, তুর্কেমেনিস্তান,  উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তান। 

তবে বিশ্বের দশটি দেশে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এইসব দেশগুলোর সরকার ধর্মীয় প্রার্থনা ও কেন্দ্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। জন সম্মুখে ধর্ম  প্রচারে রয়েছে নিষিদ্ধতা।  এই ১০ টি দেশেগুলো হল -চীন, কিউবা, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু দেশ।

একটি রাষ্ট্রের সার্বিক কাঠামো কেমন হবে, সেটি নির্ভর করে সে রাষ্ট্রের ধর্মীয় ভিত্তির উপর। ধর্মীয় আদর্শের উপর ভিত্তি করে বিশ্বে সাধারণত পাঁচ ধরণের রাষ্ট্রিয় ব্যাবস্থা দেখা যায়। যেমন সেকুলার রাষ্ট্র, দিব্যতান্ত্রিক রাষ্ট্র, বহুসংস্কৃতিক রাষ্ট্র, রাষ্ট্র-ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র এবং নাস্তিকবাদি রাষ্ট্র। 

তবে যে ভিত্তিতেই ব্যবস্থা প্রণিত হোক না কেন, কোন ব্যবস্থাই আলোচনার উর্ধ্বে নয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের রাজনীতিতে ডি ফ্যাক্টো হিসাবে রাষ্ট্রধর্মের প্রাধান্য দেখা যায়। 

তবে ইন্দো প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্তগত দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে উনিশ শতক থেকেই বিভিন্ন সময় রাজনীতিতে ডি ফ্যাক্টো হিসাবে কাজ করেছে ধর্ম। যেমন ১৯০৬ সালে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিমলীগ গঠন, বঙ্গভঙ্গ ও বঙ্গভঙ্গ রোদ,  ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান বিভাজন।

তবে শুধু রাজনীতিই নয়, ধর্মকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে দেখা দিয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। উল্লেখযোগ্য দাঙ্গার মধ্যে রয়েছে গুজরাটের সাম্প্রতিক দাঙ্গা, ১৯৪৬ সালের নোয়াখালীর দাঙ্গা, ১৯৮৩ সালের নেলি গণহত্যা, ১৯৮৪ সালের ভিভান্দি দাঙ্গা, জম্মু কাশ্মীর দাঙ্গা, ১৯৮৭ সালের মিরাট সাম্প্রতিক দাঙ্গা। এছাড়া ২০০৭ সালের কান্ধমাল বড়দিনের সহিংসতা, ২০১৫ সালের নদীয়া দাঙ্গা, ২০১৬ সালের কালিয়াচক দাঙ্গা, ২০১৭ সালের বাদুরিয়া দাঙ্গা, ২০১৮ সালের বিহার দাঙ্গা এবং ২০২০ সালের বেঙ্গালুর ও দিল্লীর দাঙ্গাগুলো সাম্প্রদায়িকতার সাথে জড়িত ছিল।   এক হিসাবে দেখা যায় ভারতে সার্বিক দাঙ্গার প্রায় ৮৬.৫% সাম্প্রদায়িকতার সাথে জড়িত।

Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.