বার্তাহীন মানুষের বার্তা- আল জাজিরা
আল জাজিরা কাতারভিত্তিক একটি গণমাধ্যম। ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’-শিরোনামের একটি ডকুমেন্টারি প্রচারের পর বাংলাদেশের বর্তমান চ্যানেলটি নিয়ে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে।
চ্যানেলটি কাতারের আমীরের কাছ থেকে অর্থ পেয়ে থাকে। তবে কাতারের আমিরের অর্থ পেয়ে থাকলেও এটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে একটি পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে থাকে। সম্পাদনায় স্বাধীনতা থাকায় বিভিন্ন বিষয় সহজে চ্যানেলটির মাধ্যমে উঠে আসে।
চ্যানেলটির ২৪ বছর আগে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। চ্যানেলটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে রাজনীতিতে এক ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বিশ্বজুড়ে আলজিরিয়ার এর প্রভাব, মিডিয়া অধ্যায়ন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও স্বীকৃতি পেয়েছে।
সিএনএন ইফেক্টের মত আল জাজিরা ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সিএনএন যেমন আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পেরেছে। সেরূপভাবে আল জাজিরা ২০১০ সালে আরব বসন্ত সৃষ্টির ক্ষেত্রে এবং ২০০৪ সালে লেবানিস ও ইরাক যুদ্ধে আল জাজিরার সম্প্রচার এমন এক মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল যেখানে নীতি নির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আল-জাজিরা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
অবশ্য বিভিন্ন সময়ে চ্যানেলটি মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থন দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। মুসলিম ব্রাদারহুড মিশরের প্রতিষ্ঠাত ধর্মীয় সংগঠন যা মূলত সুন্নি ইসলাম, সামাজিক সংরক্ষণশীলতা, ধর্মীয় সংরক্ষণশীলতা এবং সাম্যবাদ বিরোধী মতাদর্শে কাজ করে থাকে।
পক্ষান্তরে অন্যভাবে দেখলে ফিলিস্তিনি ইস্যু, ভারতের কাশ্মীর ইস্যু এবং রোহিঙ্গা ইস্যুসহ মুসলিম দেশগুলোকে তুলে ধরার মতো সক্রিয়ভাবে কোন মিবিয়া ভূমিকা পালন করতে ব্যার্থ। সেখানে আল-জাজিরাই সহিষ্ণুতার সাথে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। এই দিক থেকে দেখলে, আল-জাজিরা বার্তাহীন মানুষদের বার্তা দিয়ে থাকে। আল জাজিরার আলোচিত কিছু ঘটনা গুলো–
ইরাক যুদ্ধ- ২০০৪ সালে ইরাক যুদ্ধে আমেরিকা বাগদাতে আল জাজিরার অফিস বন্ধ করে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন আমেরিকার সেনাদের জন্য এক বিব্রত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ঘটনার অজুহাত দিয়ে মার্কিন মিলিটারিরা ২০০৪ সালে ইরাকে আল জাজিরার স্টাফ রিপোর্টার দের হত্যা পর্যন্ত করেছিল।
সিরিয়া গৃহযুদ্ধ: সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে আল জাজিরার প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সিরিয়া সরকার বিরোধীদের পক্ষে চ্যানেলটির অবস্থান সমালোচিত হয়েছে।
বাহরাইন: ২০০০ সালে বাহরাইন নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করার পর বাহরাইন সরকার আল জাজিরার সম্প্রচার বাহরাইনে নিষিদ্ধ করে।
মিশর উত্তেজনা: ২০১১ সালে মিশরের তাহরিয়ার স্কোয়ারে রাজনৈতিক উত্তেজনা যখন তুঙ্গে তখন আল জাজিরা মোহাম্মদ মুরসি এবং মুসলিম ব্রাদারহুডসহ দলীয় গোষ্ঠীর সমর্থনের অভিযোগে ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১-তে মিশরীয় সরকার আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। একই কারণে ২০১৩ সালেও মিশরীয় মিলিটারিদের চাপে ২২ জন আল জাজিরার স্টাফ রিপোর্টারদের রিজাইন দেওয়া হয়েছিল।
ভারত : ভারতের কাশ্মীর ইস্যুতে আল জাজিরা কাশ্মীর বিষয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন দেওয়ায় ইন্ডিয়া সরকার পাঁচ দিনের জন্য আল জাজিরা সম্প্রচার বন্ধ করেছিল।
ইসরাইল: ২০০৮ সালে আল জাজিরার একটি প্রোগ্রাম ওয়েলকাম হোম শিরোনামের একটি প্রোগ্রামের জন্য ইসরাইল সেদেশে আল জাজিরাকে নিষিদ্ধ করে। যে ধরনের অভিযোগ এখন বাংলাদেশ করছে, একই ধরনের অভিযোগ ইসরাইল থেকে কয়া হয়। চ্যানেল টি নীতি লঙ্গন ভাঙ্গার দায়ে ইসরাইল সরকারের প্রেস অফিস চ্যানেলটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সাথে, আল জাজিরার কোন সাংবাদিক ইসরাইলের সরকারি অফিস ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে।