রবিনসন ক্রুসো ( Robinson Cruise)

#রবিনসন_ক্রুসো : পর্ব -০১, মোট পর্ব : ০৮

আজ প্রথম পর্বে আমি ড্যানিয়েল ডিফোর জনপ্রিয় ফিকশন 'রবিনসন ক্রুসো' নিয়ে আলোচনা করবো। 

১৬৫৯ সালে জন্ম ড্যানিয়েল ডিফো একজন ইংরেজ বহুমুখী লেখক, সাংবাদিক ও ব্যাবসায়ী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ৫০০ অধিক বই লেখেন। তার লেখায় স্থান পায় রাজনীতি, অপরাধ, ধর্ম, বিবাহ, মনোবিদ্যা এবং অতিপ্রাকৃতি সহ ইত্যাদি নানা বিষয়। এই প্রতিভাবান লেখক ১৭৩১ সালে লন্ডনে মিত্যুবরণ করেন। 

১৭১৯ সালে প্রকাশিত রবিনসন ক্রুসো সেই সময়ে তার অনেক জনপ্রিয় একটি কাল্পনিক উপন্যাস যা অধিক বিক্রয় হয়েছিল।  উপন্যাসখানি রবিনসন ক্রুসো নামে এক ভগ্নপোত ব্যক্তির কাল্পনিক আত্মজীবনীর আকারে রচিত। এই ব্যক্তি ভেনেজুয়েলার কাছে একটি নির্জন বিষুবীয় দ্বীপে ২৮ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় অবস্থান করেন। 

এই লেখার মাধ্যমে ইংরিজে সাহিত্যে সাহসিক যাত্রা ( adventure journey)  গুলো জনপ্রিয় হতে থাকে। এটির জনপ্রিয়তা দেখে অনেক লেখক একই ধারার সাহসিক যাত্রা  লেখা শুরু করে। যেমন জোনাথন সুইফটের গালিভারস ট্রাভেল, ওয়াল্টের স্কটের ইভ্যানহু, রবার্ট হুয়ার্ডের ক্যানান দ্যা কনকুয়েরর ইত্যাদি। 

রবিনসন ক্রুসো পুরো বইটি পড়ার পর আমরা যে বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে পারবো :-
     ১। সাহসি যাত্রার মাধ্যমে রবিনসন ক্রসোর মনোমানসিক উন্নতি। 
     ২। রবিনসন ক্রুসোর যাত্রার পিছনে তার অর্থনৈতিক উন্নায়নের ইচ্ছা। ( Economic doctrine) .
     ৩। ড্যানিয়েল ডিফো পুরো কাল্পনিক গল্পটাকে যেভাবে বাস্তবমুখি ( realistic impact)  করেছেন।
     ৪।  গল্পে রুপকধর্মীর ব্যাবহার। ( Allegorical significant) .
     ৫।  গল্পে প্রহসন উপাদানের (Comic element) ব্যাবহার 
     ৬। রবিনসন ক্রুসোর জীবন যুদ্ধ ( Conflicts -External or internal)  
     ৭। রবিনসন ক্রসোর মনো বিশুদ্ধতার উন্নতি। ( Puritan's progress -  Sin, punishment and Repentance) 

প্রতিটি পর্বে আমি ধারাবাহিকভাবে সবগুলো বিষয় আলোচনা করবো। আজ প্রথম পর্বে - পুরো ফিকশনাল গল্পটি সংক্ষিপ্তভাবে আলোকপাত করবো। 

১৬৫১ সালে কুইন্সডেক থেকে ক্রুসো সমুদ্র যাত্রা শুরু করে তার পিতামাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে। তার পিতামাতা চেয়েছিল সে অন্য পেশায় নিযুক্ত হক। প্রথম যাত্রায় সে ঝরের কবলে পরে : তা সত্ত্বেও সে মনোবল অটুট রাখে এবং দ্বিতীয় বার সমুদ্র যাত্রা শুরু করে। তার এই যাত্রাও ব্যাহত হয় স্যালি জলদস্যুদের দ্বারা যারা তার জাহাজটিকে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং ম্যুরের দাসে পরিণত করে। 

দুই বসর পর ক্রুসো এক বালককে নিয়ে পালিয়ে যায় সেখান থেকে। যাত্রাপথে এক পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন তাদের উদ্ধার করে যে জাহাজটি ব্রাজিলে যাচ্ছিলো। ক্যাপ্টেনের সাহায্যে ক্রুসো সেখানে আবাদ করার সুযোগ পায়। কয়েক বছর পরে ক্রুসো আফ্রিকা থেকে দাস আনার জন্য একটি অভিযানে যান কিন্তু পথিমধ্যে ঝড়ের কবলে পরে তাদের জাহাজ বিধ্বস্ত হয় এবং তিনি সমুদ্র থেকে ৪০ মাইল দূরে একটি দ্বীপে আশ্রয় নেন যেটি অরিনোকো নদীর মুখের কাছেই অবস্থিত। ক্রুসো দ্বীপটিকে আইল্যান্ড অফ ডেসপেয়ার (Island of Despair) নামে ডাকেন। ক্রুসোর বর্ণনাকৃত দ্বীপটি সম্ভবত টোবাগোর ক্যারিবিয়ান দ্বীপের উপর ভিত্তি করে বলা, যেহেতু ত্রিনিদাদ থেকে ঐ দ্বীপটি অল্প উত্তরে ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অরিনোকো নদীমুখের কাছে অবস্থিত। 

সে ঐ দ্বীপে পেঙ্গুইন এবং সীল দেখেন। সে ছাড়া বাকী আর তিনটি প্রাণী ঐ দ্বীপে তার সাথে জীবিত রয়েছে- একটি হচ্ছে ক্যাপ্টেনের কুকুর এবং অন্য দুইটি বিড়াল। ক্রুসো তার হতাশাকে জয় করে ভাঙ্গা জাহাজ থেকে অস্ত্র, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য দরকারি জিনিস নিয়ে আসেন এটি ডুবে যাওয়ার পূর্বে। সে একটি গুহার কাছে বেড়া দিয়ে তার বাসস্থান তৈরি করে। কাঠের ক্রসের উপর চিহ্ন দিয়ে সে ক্যালন্ডার তৈরি করেন। যেসব যন্ত্রপাতি সে জাহাজ থেকে উদ্ধার করেছিলো সেগুলো এবং কিছু সে নিজে লোহাকাঠ দিয়ে তৈরি করেছিলো সেগুলি দিয়ে সে শিকার শুরু করে, বার্লি এবং ধান উৎপাদন করেন, আঙ্গুর থেকে কিসমিস, মাটির জিনিস পত্র তৈরির কৌশল রপ্ত করেন এবং ছাগল পালন করেন। সে একটি তোতা পাখিও পুষেন। সে বাইবেল পড়তে শুরু করে এবং ধার্মিক হয়। সে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয় সব কিছু পাবার জন্য যদিও সে মানব সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন।

আরও কিছু বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরে ক্রুসো স্থানীয় নরখাদকের দেখা পায়, যারা মাঝেমধ্যে এই দ্বীপে আসে বন্দীদের হত্যা করে খাওয়ার জন্য। সে প্রথমে পরিকল্পনা করে যে সে তাদেরকে হত্যা করবে এই ধরনের জঘন্য কাজ করার জন্য। কিন্তু পরে সে বুঝে যে তাদেরকে হত্যা করার কোন অধিকার তার নেই যেহেতু তারা জেনে এই কাজ গুলো করছে না। সে কল্পনা করে যে, একজন অথবা দুইজন বন্দী নরখাদকদের কাছ থেকে উদ্ধার করে তার চাকর বানাতে। যখন সে দেখে যে একজন বন্দী তাদের কাছ থেকে পালিয়েছে, সে ঐ পলায়নকৃত লোককে সাহায্য করে এবং নরখাদকদের কাছ থেকে উদ্ধার করে। ক্রুসো তাকে শুক্রবারে পায় বলে তার নাম রাখে ফ্রাইডে। ক্রুসো তারপর তাকে ইংরেজি শেখায় এবং খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত করেন। পরবর্তীতে যখন আরও স্থানীয় নরখাদক তাদের ঐ ভোজ উৎসব করতে আসে তখন ক্রুসো এবং ফ্রাইডে দুইজন মিলে নরখাদকদের বেশিরভাগকে হত্যা করে এবং আরও দুইজন বন্দীকে রক্ষা করে। তাদের একজন ফ্রাইডের বাবা এবং অপরজন একজন স্পেনীয় নাবিক, যিনি ক্রুসোকে জানান যে আরও একটি স্পেনীয় জাহাজ প্রধান ভুমিতে বিধ্বস্ত হয়েছে। তার পর তারা একটি পরিকল্পনা করেন এইভাবে যে, স্পেনীয় নাবিক এবং ক্রুসোর বাবা জাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঐ প্রধানভূমিতে যাবে এবং অন্য যারা আছে তাদের ফেরত এনে একটি জাহাজ তৈরি করে তারা সবাই মিলে স্পেন বন্দরের দিকে রওনা করবে।

স্পেনীয়রা  ফিরে আসার পূর্বেই একটি ইংরেজ জাহাজ আবির্ভাব হয়; এই জাহাজের বিদ্রোহীরা ঐ জাহাজটিকে নির্দেশ দিয়ে চাল্লাচ্ছে এবং বিদ্রোহীরা অভিপ্রায় করে যে তারা তাদের ক্যাপ্টেনকে এই দ্বীপে পরিত্যাক্ত অবস্থায় রেখে যাবে ফলে পুরো জাহাজ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ক্রুসো এবং ঐ ইংরেজ ক্যাপ্টেন তার জাহাজের নিয়ন্ত্রণ তার হাতে ফিরে পাবার জন্য একটি চুক্তি করে। তারপর ক্রুসো, ক্যাপ্টেন এবং ঐ ইংরেজ জাহাজের বিশ্বস্ত নাবিকেরা মিলে জাহাজটি তাদের আয়ত্তে নিয়ে আসেন এবং দুষ্ট ঐ বিদ্রোহীদের দ্বীপে রেখে যায়। ইংল্যান্ডে ফিরে যাবার পূর্বে ক্রুসো বিদ্রোহী নাবিকদের দেখান যে কিভাবে সে একাকী এই দ্বীপে টিকে ছিলো এবং বলে যান যে, আরও লোক এই দ্বীপে আসতে থাকবে। ক্রুসো ১৯শে ডিসেম্বর ১৬৮৬ সালে তার দ্বীপ ত্যাগ করেন এবং ১১ই জুন ১৬৮৭ সালে ইংল্যান্ডে পৌছায়। সে ফিরে এসে জানতে পারে যে তার পরিবার মনে করেছে যে সে মারা গেছে। ফলে তার বাবা উইলে তার জন্য কিছুই রেখে যাননি। ক্রুসো তারপর লিসবনে যান ব্রাজিলে তার এস্টেটের মুনাফা ফিরে পেতে এবং সেখান থেকে সে প্রচুর সম্পদ লাভ করেন। অবশেষে সে তার সম্পদ নিয়ে স্থল পথে আসেন সমুদ্র পরিহার করার জন্য। ফ্রাইডে তার সাথে ছিলো এবং পথিমধ্যে তারা ক্ষুধার্ত নেকড়ের সাথে শেষ একটি দুঃসাহসিক যুদ্ধের সম্মুখীন হয় যখন তারা পায়ারনিস (Pyrenees) পার হচ্ছিলো।


Theme images by duncan1890. Powered by Blogger.