কৃষ্নসাগরীয় রাজনীতি: তুরস্কের ত্রিমুখী অবস্থান
ভৌগোলিক সুবিধার জন্যে ইতিহাসে রাশিয়া বার বার তুরস্ক দখল করার চেষ্টা করেছে। অর্থাৎ সেই সময় থেকেই রাশিয়ার সাথে তুরস্কের বিরোধ রয়েছে। তবে বর্তমানে বিশ্ব রাজনীতির অবস্থা বেশ জটিল ও বহুমুখী রূপ নিয়েছে। আজ আমরা জানব, বর্তমান সময়ে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের কৌশলগত অবস্থান এবং কৃষ্ণ সাগরীয় ভূ-রাজনৈতি।
আমেরিকার চাপ মোকাবিলার ক্ষেত্রে বর্তমানে রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যে কৌশলগত বন্ধুত্ব থাকলেও নিজস্ব সার্কেলে এসে রাশিয়া এবং তুরস্ক সবসময় দ্বন্ধিক অবস্থান গ্রহণ করে। আর তাই জর্জিয়া, ইউক্রেন এবং মলদোভার মিত্র দেশ হিসেবে নিজেদের রেখেছে তুরস্ক।
জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছাড়াও তুরস্ক ওআইসি, ইসিও, ডি-8, এবং জি-20 এর সদস্য।
এ ছাড়া তুর্কি পররাষ্ট্রনীতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক। এখানে উভয় দেশেরই অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। আর তা হলো সোভিয়েত আগ্রাসন মোকাবেলা করা। আর এই লক্ষ্যেই তুরস্ক ১৯৫২ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয়। এর মাধ্যমে তুরস্ক ওয়াশিংটনের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলে।
তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। ইরাক ও সিরিয়া সীমান্তের কাছে তুরস্কে ন্যাটোর বিমান ঘাঁটি রয়েছে। ইসরাইলের সাথেও তুরস্কের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে তুরস্কের চেয়ে বড় প্রতিরক্ষা শক্তি। তুরস্কে প্রতিরক্ষা বিভাগে মোট ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫০ জন সামরিক সদস্য রয়েছে। ন্যাটোভুক্ত যে পাঁচটি দেশ যৌথ পরমাণু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তুরস্ক তার মধ্যে অন্যতম সদস্য। বাকি দেশগুলো হলো বেলজিয়াম, জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ড। তুরস্ক তাদের প্রতিরক্ষা বিভাগকে আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে ১৬ হাজার কোটি ডলারের কর্মসূচি গ্রহণ করে।
১৯৮০ সালের পর তুরস্ক পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিশেষ করে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বড় ধরনের লেনদেনে জড়ায় দেশটি। আর এসব ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সমর্থন পেয়েছে তুরস্ক।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙ্গে যাওয়ার পর কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী সোভিয়েত ভূখন্ড থেকে ১৫ টি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। যাদের মধ্যে ইউক্রেন, মলদোভা এবং জর্জিয়ার কৃষ্ণ সাগরের সাথে সীমানা রয়েছে। বিভিন্ন কারণে রাশিয়ার সাথে এই তিনটি রাষ্ট্র বেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। আর তাই বর্তমানে রাশিয়ার সাথে ইউক্রেন, মলদোভা এবং জর্জিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ ঝুকির মধ্যে রয়েছে।
তবে বর্তমান রাজনৈতিক পেক্ষাপট অনুযায়ী রাশিয়ার সংকট মুহূর্তে তুরস্ক কখনোই কৃষ্ণ সাগররীয় অন্যান্য দেশগুলোর সাথে সরাসরি পক্ষ নিবে না। এর কারণ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রণক্ষেত্রে তুরস্ক ও রাশিয়া কৌশলগত বন্ধুত্ব গ্রহণ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও ফ্রান্সের হুমকি মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে তুরস্ক ও রাশিয়া এক হয়ে কাজ করছে। অর্থাৎ কৃষ্ণ সাগরীয় সংকটে তুরস্ক ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চেষ্টা করছে।